বিমানের ভাড়া করা উড়োজাহাজ মাস্কট থেকে ভেগেছে by আজাদ সুলায়মান

বিমানের লিজে নেয়া ৭৪৭ উড়োজাহাজটি মাসকট থেকে পালিয়ে গেছে। বুধবার ঢাকা থেকে জাহাজটি ৫০০ যাত্রী নিয়ে মাসকট যায়। তাদের বিমানবন্দরে রেখেই জাহাজটি আকস্মিক উধাও হয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ বিমানের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল।


আর ফিরতি ফ্লাইটে মাসকট থেকে যাদের নিয়ে আসার কথা ছিল তারা রাতে সেখানকার বিমানবন্দরে আটকা পড়ে বিক্ষোভ করেছেন। জানতে চাইলে বিমানের ভারপ্রাপ্ত এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমদ বলেন, কাজটি ওরা ভাল করেনি। এভাবে কিছু না বলে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তবে কিছু দিন ধরে ৭৪৭ উড়োজাহাজটির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল। সপ্তাহখানেক পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে এমনিতেই চলে যেত।
জাহাজটির এমন কা- জ্ঞানহীন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে মাসকট বিমানবন্দরে আটকাপড়া যাত্রী সুমন ফোন করে জনকণ্ঠকে জানান, এমন তেলেসমাতি কারবার দুনিয়ার আর কোন এয়ারলাইন্সে ঘটার নজির তার জানা নেই। বিমানের ভাবমূর্তি আজ এতটাই ভূলুণ্ঠিত যে, লিজে আনা বিদেশী উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেতাই করার দুঃসাহস দেখালেও কেউ নেই দেখার। থ্যাঙ্কস এয়ার মার্শাল। গড ব্লেস বিমান।
জানা যায়, বুধবার সকালে বিমানের লিজে আনা জাহাজটি প্রায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে মাসকট যায়। সেখান থেকে ফিরতি ফ্লাইটে ২৬০ যাত্রী নিয়ে রাত আটটায় ঢাকায় আসার শিডিউল ছিল। কিন্তু জাহাজটি মাসকট মানবন্দরে যাত্রী নামিয়েই কোনপ্রকার ঘোষণা ছাড়াই নিজ দেশ পর্তুগাল রওনা দেয়। এটা তখনও জানতেই পারেনি সেখানকার স্টেশন ম্যানেজার। তখন বিমানবন্দরের বিমান কাউন্টারে ২৬০ যাত্রীর চেকইন সম্পন্ন হয়ে গেছে। তারা যখন জাহাজে উঠতে যাবে তখন বিমানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানতে পারেন বোর্ডিং ব্রিজে ৭৪৭ নেই। এ অবস্থায় তারা বেয়াকুব বনে যান। এমনকি জাহাজটি যাত্রী অফলোড করার পর পরই টেক অফ করে মাসকট বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে এমন সংবাদ সেখানকার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও বিমানের লোকজন তা বিশ্বাসই করতে পারেননি।
জানা যায়, জাহাজ না থাকায় মাসকট থেকে ঢাকায় যোগাযোগ করা হলে বিমান থেকে কোন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতেও ব্যর্থ হয়। এতে সেখানে যাত্রীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করলে ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয় তাদের রাতে হোটেলে নিয়ে ট্রানজিট যাত্রীর মর্যাদায় রাখার।
তাদের কখন আনা হবে জানতে চাইলে এমডি মোসাদ্দেক আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে একটি ডিসি-১০ পাঠিয়ে তাদের দেশে আনা হবে। সকালে অবশ্য এমনিতেই একটি ৭৩৭ জাহাজ মাসকট যেত। তার পরিবর্তে এখন বড় জাহাজ ডিসি-১০ পাঠানো হবে।
জাহাজটি কিছু না বলে হঠাৎ কেন চলে গেল, মাসকট থেকে পালিয়ে গেল, জানতে চাইলে বিমানের এক পরিচালক বলেন, এক বছর আগে এয়ার আইসল্যান্ড থেকে সুপরিসর ৭৪৭ জাহাজটি এক বছরের জন্য চুক্তিতে নেয়া হয়। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হতো। এ ব্যাপারে লেনদেন নিয়েও বিমানের সঙ্গে একটা টানাপোড়েন চলছিল। কিন্তু গতকালই তা চলে যাবে এমনটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন।
সূত্র জানায়, জাহাজটিকে অগ্রিম মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছিল। সে টাকা আত্মসাত করেই চলে গেল। শুধু তাই নয়, জাহাজটিতে বিমানের অনেক প্রয়োজনীয় মাল ছিল। যেমন ট্রে, পিক আপ, মেডিসিন খাবার দ্রবাদি। এ ছাড়া কয়েক যাত্রীর লাগেজও খোয়া গেছে। জাহাজটি বুধবার রাতেই নিজ দেশ পর্র্তুগাল ফিরে গেছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, এ কোম্পানি থেকে লিজে আনা অপর একটি জাহাজ এর আগে গত বছর বিমানের সিকিউরিটির প্রায় ২২ কোটি টাকা আত্মসাত করে চলে যায়।

No comments

Powered by Blogger.