পুঁজিবাদ ও মানুষের মৃত্যু-উপহার নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী- সংস্কৃতি সংবাদ

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের শিল্প ভুবনকে ক্রমাগত ঐশ্বর্যম-িত করে চলেছে মঞ্চনাটক। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও এখন সমাদৃত বাংলাদেশের মঞ্চনাটক। আর এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ঢাকার মঞ্চে যোগ হলো আরেকটি নতুন নাটক।


পুঁজিবাদ ও মানুষের মৃত্যু-উপহার নামে নয়া এ নাটক মঞ্চে এনেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলারের ডেথ অব এ সেলসম্যান অবলম্বনে নির্মিত প্রযোজনাটির বাংলায়ন করেছেন ফতেহ্্ লোহানী। নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাবি নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল হক তিতাস। রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যায়ের নাটম-লে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীর আগে ছিল আনুষ্ঠানিকতা। নাটকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দীন ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন। সভাপতিত্ব করেন নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাইফুল ইসলাম।
বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় আক্রান্ত ভয়াল পুঁজিবাদের আগ্রাসী তৎপরতার নির্মমতাকে উপজীব্য করে আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। উঠে এসেছে পুঁজিবাদের গর্ভে জন্ম নেয়া টাকার পাল্লায় নির্ধারিত অমানবিক সমাজের করুণ চিত্র। যেখানে পণ্য বিক্রির সামর্থ্য ব্যক্তির নিজেকে বেচার সামর্থ্যরে সমান। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যেন প্রতিবাদী উচ্চারণ এ নাটক। অনিঃশেষ ভোগের লিপ্সায় আক্রান্ত মার্কিন সমাজ-ব্যবস্থায় অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়া ব্যক্তির লড়াই চিত্রিত হয়েছে নাটকে। প্রযোজনাটি বিষয়ের উৎসগত দিক থেকে আমেরিকান হলেও বাংলাদেশেরও প্রেক্ষাপটে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এদেশের মেট্রোপলিটান সমকালীন জীবন-বাস্তবতায় প্রযোজনাটি হয়ে ওঠে বর্তমান সময়ের দ্ব্যর্থহীন জীবনচিহ্ন। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র উইলি লোমান পেশায় বিক্রেতা। নিজেকে বিক্রি করতে পারে না বলে সে পার্সন কিংবা ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে না। ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলার প্রতিরোধ ও বিত্তগত সাফল্যের মিথ দিয়ে তৈরি আমেরিকান স্বপ্নতাড়িত উইলির মৃত্যু যেন সব শেষে আমেরিকান জনগণের মৃত্যুকেই মঞ্চস্থ করে। বিশ্বায়নের জমানায় আমি, তুমি কিংবা সে যেন আদতে জিন্দালাশÑ এমন কথাই বর্ণিত হয় নাটকের গল্পে। নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক জিয়াউল হকের ভাষ্য, ঢাবির নাট্যবিদ্যাচর্চায় যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় এটি তার দালিলিক চিহ্ন। এখানে আধিপত্য বিস্তারের অভিপ্রায় থেকে অভিনয়শিল্পীদের নেয়া হয়নি। বরং অভিনয় অনুশীলনে সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও ইম্প্রোভাইজেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নির্দিষ্ট চরিত্র খুঁজে নিয়েছেন। আর অভিনয়ের জৈবতাত্ত্বিক প্রকাশভঙ্গির জন্য শিল্পীরা নিজস্ব জীবনাভিজ্ঞতার আশ্রয় নিয়েছেন।
নাটকে উইলি লোমান চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সিফাত-ই-রাব্বী। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা ইসলাম, ঐশ্বর্য আজাদ, সাবিহা সুলতানা, নূর-ই-তানজীম, লাহুল মিয়া, মাহবুবুর রহমান সবুজ, অমিত জাহিদী হিমেল, আশরাফুজ্জামান শুভ, মোঃ আব্দুল হামিদ, রিদওয়ানুল কবির নাহিদ, মীর মোঃ মানজুরুল হক, আবে হায়াত, ফাহারিয়া খান, শাইখুল কামাল নাহিয়ান, রিয়াদ-উর-রহমান, চন্দনা বিশ্বাস, কানিজ ফাতিমা মৌসুমী, সাহিদা সুলতানা ও আরিফা সুলতানা তানিন। নির্দেশনার পাশাপাশি মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন জিয়াউল হক। আবহ-সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন আবে হায়াত মোস্তফা জালাল সৈকত।
আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ নাটকের প্রদর্শনী। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় নাটম-লে মঞ্চস্থ হবে প্রযোজনাটি। দর্শনার্থীরা ৫০ ও ১০০ টাকা দর্শনীর দেখতে পারবেন নাটকটি।
যাত্রাপালা বাঙালীর দায় মুক্তি মঞ্চস্থ
রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নেত্রকোনার নেত্রকথন নাট্য সংঘের যাত্রাপালা বাঙালীর দায় মুক্তি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টি উপজীব্য করে আবর্তিত হয়েছে এ যাত্রাপালার কাহিনী। অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান নির্দেশিত এ যাত্রাপালায় বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন তাজিম, সাজ্জাদ, মোজাম্মেল, গাজী, হান্নান, হাবিব, সালাম, বারেক, সেলিম, রাখাল, জব্বার, সুমেশ, সদানন্দ, মনি, স্বর্ণালী ও রুনা। এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরেশী। বক্তব্য রাখেন সাজ্জাদ হোসেন খান।
জেনেসিস থিয়েটারের ২২ বছর পূর্তি উদ্যাপন
সময়ের বহমানতায় পথচলার ২২ বছর পূর্ণ করল জেনেসিস থিয়েটার। এ উপলক্ষে রবিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত ও নৃত্যকলা আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, মূকাভিনয়, নৃত্য পরিবেশনা ও নাটক প্রদর্শনীর মাধ্যমে উৎসবের আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতি হোক জীবন-প্রেম-দ্রোহ, বিশ্বমানবতার স্বপক্ষে সেøাগানে উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন সঙ্গীতব্যক্তিত্ব আজাদ রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সভাপতিত্ব করেন জেনেসিস থিয়েটারের সভাপতি নূর হোসেন রানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রিপন শান ও কাজী দিনারা সুলতানা বিন্তি।
অনুষ্ঠানে জেনেসিস থিয়েটার প্রযোজিত নজরুলের নাটক লিচু চোর, দামাল ছেলে নজরুল, সভাকবি ও দুরন্ত নজরুল ভিডিও স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয়। মূকাভিনয় পরিবেশন করেন নিথর মাহবুব। কবিতা আবৃত্তি করেন শফি কামাল। এছাড়াও ছিল নৃত্য পরিবেশনা।

No comments

Powered by Blogger.