এক মাসের মধ্যে শিল্পে গ্যাস সংযোগ ॥ জ্বালানি উপদেষ্টা

আগামী এক মাসের মধ্যে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী। রবিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।


গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগ একেবারে বন্ধ রয়েছে। এখন শিল্পে উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। জানা গেছে, এখন যে যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে তার কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে শিল্প মালিকদের আবেদনের ভিত্তিতে সকলকে গ্যাস সংযোগ দেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
উপদেষ্টা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, বিদ্যুত পেতে হলে সবাইকে দাম দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সকলে সাশ্রয়ী হলে বিদ্যুত বাবদ বিল কমে আসবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের বিলের ক্ষেত্রে সøাব পদ্ধতির পরিবর্তন করায় বিল সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিইআরসি এ বিষয়ে কাজ করছে। নতুন সøাব পুনর্নির্ধারণ হলে সমস্যার সমাধান হবে। তিনি সমালোচকদের ইঙ্গিত করে বলেন, না জেনে সাধারণ বক্তব্য দেয়া সহায়ক নয়। আলোচনা করার আগে সবাইকে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুত সচিব আবুল কালাম আজাদ। এতে ২০১৬ সালে ১৭ দশমিক তিন শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কয়লাবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। একই সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্রের আয়ের পাঁচ শতাংশ স্থানীয় উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে বলে সরকারের নির্দেশনা আছে বলেও উল্লেখ করেন সচিব।
সেমিনারে পরিবেশবিদ, সাংবাদিক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানির কোন বিকল্প নেই। তাই বিদ্যুত নিশ্চিত করতে কয়লা থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে যেতে হবে। তবে আমদানিকৃত কয়লার পাশাপাশি নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। বেসরকারী খাতের চেয়ে সরকারী খাতে বিদ্যুত উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। এমনকি বেসরকারী খাতে দেয়া হলেও তাতে বিদেশীদের না দিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করা হয়। আর যে কোন ধরনের চুক্তি বা সমীক্ষা জনসমক্ষে প্রকাশ করার জোর দাবিও জানান অধিকাংশ বক্তা।
সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, কয়লার ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে পরিকল্পনা করার কোন সুযোগ নেই। অবশ্যই ২০ থেকে ২৫ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আর আমদানির চেয়ে নিজস্ব কয়লাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নতুন কেন্দ্র করার আগে বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র দুটির ১০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে পরিবেশের ওপর প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে একটি কয়লা গবেষণা ইনস্টিটিউট করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আপনারা (এফবিসিসিআই নেতারা) হয়ত কষ্ট পেতে পারেন, তবুও বলছি শুধু মুনাফার সামনে পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা ও মুনাফার স্বার্থে আমরা পরিবেশকে ধ্বংস করছি। আজ সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, নদী, পানি, বায়ু, মাটি সব আমরা দূষিত করে ফেলেছি। বুড়িগঙ্গার যে অবস্থা হয়েছে, হাজারো চেষ্টা করেও এক ইঞ্চি বুড়িগঙ্গা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.