কক্সবাজার-সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাক
অপূর্ব সম্ভাবনার জনপদ সমুদ্রকন্যা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত তো বটেই, বিরল সব প্রাকৃতিক ও ভূতাত্তি্বক বৈশিষ্ট্যে কক্সবাজার অনন্য। অথচ বিপুল আশাবাদ সত্ত্বেও একে পূর্ণ সম্ভাবনায় প্রস্ফুটিত করতে পারিনি আমরা। বিশ্বের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমুদ্রসৈকতগুলোতে যেভাবে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে, যেভাবে সেগুলো নিরাপদ
বিনোদন ও প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেভাবে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সৈকতকেন্দ্রিক শহরগুলো যেভাবে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত তেমন মর্যাদা কক্সবাজার পায়নি। একথা সত্য, কক্সবাজারে এখন পর্যটকের ভিড় বছরভর লেগে থাকে। বিদেশি পর্যটকদের হার কম হলেও, দেশের মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে চূড়ান্ত বিচারে কক্সবাজারই জনপ্রিয়তম পর্যটন কেন্দ্র। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার বাছবিচার নেই, ছুটি মিললেই দেশের মানুষ কক্সবাজারকেই গন্তব্য নির্ধারণ করে ঘর ছাড়েন। দেশের মধ্যে কক্সবাজারের এ অর্জনকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। সঙ্গে একথাও সত্য, পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা, সেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারলে এ সমুদ্রসৈকত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় হতে পারে। এ জন্য যেমন মনোযোগ দিতে হবে দূষণমুক্ত সমুদ্রের দিকে, তেমনি সৈকতকে করতে হবে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত। সৈকত সংলগ্ন স্থাপনাগুলোকেও হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত। সবচেয়ে বড় কথা, রাজধানী শহরের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুন্দর ও সাবলীল করতে হবে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এ ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি বলে বিবেচিত হচ্ছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজারের সঙ্গে এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা দেশের অন্য অঞ্চলের সুলভ যোগাযোগ ব্যবস্থার পথ খুলে যাবে। দেশের পর্যটকদের কাছে এ রেলপথ জনপ্রিয় হবে। এ রেলপথের গুরুত্ব শুধু সৈকতগামী পর্যটকদের কাছেই নয়, এ পথের তাৎপর্য আরও বৃহৎ ও ব্যাপক। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে এ রেলপথের যোগ আছে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার হয়ে এ রেলপথটি দূরপ্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন করে দেবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রেলপথ স্থাপন সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ফলে এ রেলপথ শুধু দেশের ভেতরে বা আঞ্চলিক ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের দুয়ার আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে। এ পথের উদ্বোধন আমাদের জন্য অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল। আমরা আশা করব, সম্ভব দ্রুততম সময়ে এটি বাস্তবায়িত হবে। এ রেলপথের মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। ফলে সৈকতসহ কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ এখনই নেওয়া উচিত। সমুদ্রসৈকতের যোগাযোগ সম্ভাবনা তো বটেই, এখানকার ভূতাত্তি্বক ও প্রাকৃতিক সম্ভাবনাকেও আমাদের কাজে লাগাতে হবে। কক্সবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বৃহৎ উদ্যোগ আসছে, এটি খুশির সংবাদ। এবার প্রধানমন্ত্রী সেখানে বেশকিছু স্থাপনা উদ্বোধন করে একটি বৃহৎ পরিকল্পনার জানান দিলেন। এগুলো সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হলে সেটিই হবে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ।
No comments