জিয়া ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও চেতনা অন্তরে ধারণ করেননি- বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় প্রধান বক্তা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অগ্রসেনানী হয়েও জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করতে পারেননি। ইতিহাসের এটাই হচ্ছে ট্র্যাজিক পরিহাস।


জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার নিহায়ত সুবিধাভোগী নন, জেনারেল জিয়া প্রকৃত বিচারে ছিলেন ওই হত্যাকা-ের অন্যতম চাণক্য শিরোমনি কুশীলব।
শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সমাজ বিবর্তন ও রাজনীতির ধারা’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বক্তৃতায় বলা হয়, দেশে চারটি নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল পালাক্রমে দুইবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। এ চারটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই শুধু ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্ব্ই’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে দুই জন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পালাক্রমে এ দেশ শাসন করে চলেছেন, তাঁরা নিজেদের দলকে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে স্বৈরশাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছেন। পুরো দেশটাকেই তাঁদের একচ্ছত্র রাজত্বের খাস তালুক হিসেবে বিবেচনা করছেন।
অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের ৭০ ধারার ভয়ে নেত্রীর সামনে থরহরি কম্পমান থাকেন বাঘা বাঘা নেতা-নেত্রীরা। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র একেবারেই নেই। এমনকি সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নির্বাচনী মনোনয়নও দলীয় প্রধানের একক কর্তৃত্বাধীনে রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে মারাত্মক বাধা দুর্নীতি। রাজনৈতিক দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, ব্যবসায়িক দুর্নীতি, ঠিকাদারির দুর্নীতি- সবই আজ প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করেছে। নখদন্তহীন দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়েছে। দেশে আয় বৈষম্যও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী তাদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যকে প্রচ- শক্তিশালী অবস্থানে উন্নীত করে চলেছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এসব ক্যাডারকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র যোগান প্রভৃতির প্রধান সূত্র বলে বহুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অল্প সময় পরই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা। এটি এ জাতির জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। আরও বেশি সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব পেলে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে যেত। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু বৈষম্য এখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে। এটি দূর করতে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের মহাপরিচালক মোনায়েম সরকার, কাজী মদিনা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.