বিশ্লেষকদের ভাষ্য-স্থিতিশীলতা স্থায়ী হবে by নাজমুল আলম শিশির

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ঘোষিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলোর প্রভাবে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ঘোষিত প্যাকেজ স্বল্প সময়ের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের জন্যই বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, তদারকির দুর্বলতা দূর করে বাজার পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের


জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারের সমস্যা স্থায়ী সমাধানের দিকে যাবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘোষিত প্রণোদনা বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমি আশা করি, বাজারে এ সিদ্ধান্তগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনবে।' তিনি আরো বলেন, 'ঘোষিত প্রণোদনায় চাহিদা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, প্রবাসী বিনিয়োগে কর মওকুফ করা হয়েছে আর ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।'
মির্জ্জা আজিজ বলেন, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করলেই হবে। তিনি আরো বলেন, যেসব সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে বাজার আরো স্থিতিশীল হয় তার জন্য আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে শেয়ারের জোগান বাড়াতে হবে, ভালো কম্পানিকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থায় কোনো কারসাজিমূলক কিছু হচ্ছে কি না, তা শক্তভাবে তদারকি করতে হবে। এসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান আরো বলেন, 'ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের এই ঘোষণাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. সালাউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, 'ঘোষিত প্রণোদনা না বলে একে কাঠামোগত সংস্কার বলা যেতে পারে। তবে যা-ই বলি না কেন, সব কিছু নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর।' তিনি আরো বলেন, এই কাঠামোগত সংস্কারে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। এই বিশ্লেষকের মতে, সামনের কয়েকটা দিনের ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। বিনিয়োগকারীরা এ প্যাকেজকে কিভাবে নেন, সেটাও দেখার বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে পারলে তা বাজারের জন্য ভালো হবে। পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের যে সিদ্ধান্ত এসেছে তা বাজারের জন্য দরকার ছিল। সিআরআর ও এসএলআর বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত এলে ভালো হতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বাজারের অর্থপ্রবাহের কথা বলা হয়েছে, তার পরও আরো অর্থ আনার সুযোগ ছিল। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাজার নিয়ে সরকার আন্তরিকতা দেখিয়েছে। তবে আগামী কয়েকটা দিন আমাদের নজর রাখতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী হবে।' তাঁর মতে, সব কিছু নির্ভর করছে প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর।
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফখর উদ্দিন আলি আহমদ বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা বাজারের জন্য ভালো, খুব ভালো হবে। এখন যা করা দরকার তা হচ্ছে সঠিকভাবে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা।' স্বল্প মেয়াদে কী হবে, তা বলতে না পারলেও তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে এ সিদ্ধান্তগুলো বাজারের জন্য ভালো হবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের জন্য কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কোনো সংজ্ঞা আমার জানা নেই। কেবল যারা ঋণ নিয়েছে, তারাই যে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নয়। অনেকেই নিজের পকেটের টাকা এনে লোকসানে পড়েছে, তারাও তো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। তাদের বিষয়টাও দেখতে হবে।'
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এ ঘোষণা সত্যিকারেই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।'

No comments

Powered by Blogger.