টিপাইমুখ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীঃ দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু করতে দেওয়া হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু কাউকে করতে দেওয়া হবে না। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা সচেতন। কীভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তা আমাদের জানা আছে। কারণ এই দেশ আমরাই স্বাধীন করেছি।’ জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি। সার্ভে করলেও আমাদের প্রতিনিধি থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিপাইমুখ নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এক রকম আর ক্ষমতায় না থাকলে আরেক রকম কথা বলে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সেই সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছিলেন, এই বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না। ক্ষমতায় থাকলে এক সুর, না থাকলে অন্য সুর—এ রকম নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর ক্ষমতাসীনেরা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে গোলামির চুক্তি বলতেন। আবার এখন তাঁরা এই চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেন। আমরা গোলামি করি না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। সুতরাং সীমানা নির্দিষ্টকরণের কথা থাকলেও অতীতের সরকারগুলো তা করেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হলেও মাত্র সাড়ে ছয় কিলোমিটার জায়গা নিয়ে সমস্যা থেকে যায়। এবার ক্ষমতায় এসে তা-ও সমাধান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছু জায়গা আমরা বেশি পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আগের সরকারগুলো কিছু করেনি। বিশেষজ্ঞরা এখন এ বিষয়ে কাজ করছেন। ধরেছি যখন এটা করে ছাড়ব, আজ হোক আর কাল হোক।’
তারেক-কোকোর পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে: সরকারি দলের নাজমা আকতারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রসহ বিগত জোট সরকারের আমলে বিদেশে পাচার করা অর্থ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধান সংশোধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন পর্যালোচনা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ১০টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে।
তারেক-কোকোর পাচার করা টাকার যেগুলো উদ্ধার হয়েছে, তা দিয়ে দেশের সাতটি বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে কি না, নাজমা আকতারের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা ফেরত এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এই টাকা দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনের প্রচারণায় এবং সাতটি বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।
মেহের আফরোজের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল সড়ক বাস্তবায়নের কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বহুল প্রত্যাশিত এই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফরিদুল হক খানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাপান সরকারের সহয়তায় নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদোগ নেওয়া হয়েছে। মংলায় সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় বেশি ধান উৎপন্ন হয়, সেসব এলাকায় খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হবে।
জাসদের হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সার, ডিজেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কৃষকের জন্য বিদু্যুতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। মেহের আফরোজের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে লোন নেগোসিয়েশনের কাজ শেষ হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই মেট্রোরেলের কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.