পুরস্কার নির্ধারণে টিআইবির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ!


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আয়োজিত তথ্য মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের পুরস্কার নির্ধারণ নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচক কমিটির রায় উপেক্ষা করে টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটি নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে। তবে টিআইবি বলছে, তিন বিচারক নয়, চার বিচারকের গড় নম্বরে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও তথ্য প্রাপ্তিতে আইনি গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিহারের মধ্য দিয়ে জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে টিআইবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটি তিন দিনব্যাপী তথ্য মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শহরের সরকারি হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত মেলায় প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী দেয়ালিকা ও সংবাদ সংগ্রহ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সরকারি ২৫টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৪২টি স্টল অংশ নেয়। সমাপনী দিনে মেলায় অংশ নেওয়া স্টলগুলোর মধ্যে 'শ্রেষ্ঠ স্টল' হিসেবে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে (এলজিইডি)।
একইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে যথাক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। অভিযোগ উঠেছে পুরস্কার প্রদানের স্বচ্ছতা নিয়ে। শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণে নির্বাচক কমিটির রায়কে উপেক্ষা করে টিআইবি নিজেদের পছন্দমতো শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করেছে। সূত্র জানায়, মেলা শুরু হওয়ার আগেই মেলায় অংশ নেওয়া স্টলগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুব্রত পাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া ও সরকারি হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফকে। কমিটির সদস্যদের জানানো হয়, তথ্য উপস্থাপনের জন্য ২৫ নম্বর ও সাজসজ্জার জন্য ২৫ নম্বর_সর্বমোট ৫০ নম্বরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করতে হবে। কমিটির সদস্যরা মেলা শুরুর দিনেই সনাকের সরবরাহ করা নম্বরপত্রে শ্রেষ্ঠ স্টল হিসেবে এলজিইডিকে প্রথম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাকে দ্বিতীয় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করেন। কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণার সময় কলেজকে বাদ দেওয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, তিন সদস্যের এক সদস্য সরকারি কলেজকে ৪৮, এলজিইডিকে ৪৬, ফায়ার সার্ভিসকে ৪৪ ও পৌরসভাকে ৪২ নম্বর দিয়েছেন। কমিটির সদস্য কলেজ অধ্যক্ষ তাঁর প্রতিষ্ঠানকে কম নম্বর দিয়েছেন।কমিটির সদস্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুব্রত পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা পৃথকভাবে নম্বর লিখে জমা দিলেও সম্মিলিতভাবে পুরস্কার পাওয়ার তালিকায় কলেজের নাম ছিল। পরে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা তিনজনের নম্বর কম্পাইল করে দেব কি না_এমন প্রশ্ন করা হলে টিআইবি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই করে নেবে বলে আমাদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়। আমরা সরল বিশ্বাসে তাতে স্বাক্ষর করে দিয়েছি।'হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ বলেন, 'আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে পরে তারা (টিআইবি) কী করেছে, বলতে পারব না। আমি নম্বর দিয়ে তাদের কাছে জমা দিয়েছি। আমার তালিকায় সরকারি কলেজ ছিল।'কলেজ অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া বলেন, 'যেহেতু আমার কলেজ অংশ নিয়েছে, সেহেতু আমাকে বিচারক প্যানেলে রাখার সময় আমি বিচারক থাকতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। তারা (টিআইবি কর্তৃপক্ষ) বারবার অনুরোধ করায় কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা এ প্রতিষ্ঠানই যে দুর্নীতির আশ্রয় নেবে, ভাবতে পারিনি।' তিনি জানান, কমিটির অন্যান্য সদস্য সরকারি কলেজকে প্রথম স্থান দিতে চাইলেও তিনি (অধ্যক্ষ) তাঁদের বিপক্ষে মত দিয়ে তৃতীয় স্থান নির্ধারণের পক্ষে মত দেন। সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে ফলাফল জমা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমিটির মতামত উপেক্ষা করে পুরস্কার প্রদানের লিখিত প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা।এ ব্যাপারে টিআইবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা ব্যবস্থাপক সৌমেন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, টিআইবির ঢাকা অফিসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সাধন কুমার দাসসহ চারজন বিচারকের গড় নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'তিন বিচারকের গড় নম্বরে সরকারি কলেজ ছিল। পরে চারজনের গড় করতে গিয়েই বাদ পড়ে গেছে।' তবে কলেজ অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া অভিযোগ করেন, চার বিচারকের কথা আগে তাঁদের জানানো হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.