শিক্ষক হত্যা

প্রকাশ্যে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এক শিক্ষককে। তাঁর ‘অপরাধ’, জনকল্যাণ করা। বর্ষায় বিদ্যালয়ের সামনের কাঁচা রাস্তাটি বাঁচাতে ট্রাক্টর চলাচলে বারণ করেছিলেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মানুষের ভালো করার জন্য যাঁর প্রাণ যায়, তিনি মহৎ। কিন্তু যারা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তারা কেমন নিকৃষ্ট? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের আর কোনো প্রতিদান হতে পারে না।
বর্ষায় রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিজেই উদ্যোগী হয়ে মাটি ভরাট করে তা সংস্কার করেন শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন। এতে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েসহ গ্রামবাসীর দুর্ভোগও কিছুটা কমে। সেই রাস্তাটি আবারও নষ্ট হতে বসেছে অবিরত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে। সিরাজ উদ্দিন ট্রাক্টরচালকদের বিরত করতে চেয়েছিলেন। তাদের বলেছিলেন, ট্রাক্টর চালানোর উপযোগী পাকা রাস্তাটি ব্যবহার করতে। কিন্তু চোরে কোনো দিন কি ধর্মের বাণী শুনেছে? তারা শোনেনি। প্রকাশ্যে রড দিয়ে শিক্ষককে পিটিয়ে তারা তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। এর আগে নারী-উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন আরেক শিক্ষক। অন্যায়ই কি তাহলে জয়ী হবে? বিবেকবান মানুষ, ন্যায় ও কল্যাণের জন্য উৎসর্গীকৃত মানুষকে কি এভাবেই মেরে ফেলা হবে? এ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো এই দেশে?
এ রকম ঘটনায় কেবল একজন ভালো মানুষের মৃত্যুই ঘটল না, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে গেল। শুভ কাজ, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো কাজ এত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা থেকে বোঝা যায়, অন্যায় ও অসহিষ্ণুতার দাপটই বেশি শক্তিশালী। এ রকম অবস্থাতেই প্রতিবাদের চেয়ে, শুভ উদ্যোগের চেয়ে চুপ করে থাকা, সয়ে যাওয়াই হয়ে ওঠে নিরাপত্তার শর্ত। এর দায় সরকারেরও। কারণ, অপরাধীরা সরকারি দলের সমর্থনে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়; তৈরি হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
নরসিংদীর শিক্ষক হত্যাকারীদের আটক করা হোক। তাদের বিচার হোক। একই সঙ্গে নিহত শিক্ষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করাও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব।

No comments

Powered by Blogger.