স্মৃতিচারণায় পালিত বার্লিন প্রাচীর নির্মাণের ৫০তম বার্ষিকী

জার্মানির ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর নির্মাণের ৫০তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে গতকাল শনিবার। এ উপলক্ষে পূর্ব জার্মানি থেকে দেয়াল পার হয়ে পশ্চিমে যাওয়ার চেষ্টায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বার্লিন নগরে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
বার্লিন প্রাচীরের স্থানে নির্মিত একটি গির্জায় এক প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। জার্মান পার্লামেন্টে সব পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত।
রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে কমিউনিস্টশাসিত পূর্ব জার্মানি ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে বিভক্ত করে রাখে বার্লিন নগরকে। ১৯৬১ সালের ১৩ আগস্ট বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছিল পূর্ব জার্মানির সরকার।
দিবসটি উপলক্ষে বার্লিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুল্ফ, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও বার্লিনের মেয়র ক্লাউস ওয়ারাইট। জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় অনুষ্ঠানটি। নীরবতা পালনের সময় এক মিনিটের জন্য থেমে যায় বাস, ট্রেনসহ বার্লিনের গোটা পরিবহনব্যবস্থা।
প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুল্ফ এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘এই দিনটি স্নায়ুযুদ্ধকালীন সেই অন্ধকার দিনগুলো স্মরণ করার একটি উপলক্ষ। আমরা এখন যেভাবে থাকতে পারছি, তাতে আনন্দিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মুক্তির জন্য পূর্ব জার্মানির মানুষের অদম্য আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের প্রতি পশ্চিম জার্মানির মানুষের যে সংহতি ছিল, আমরা তা নিয়ে গর্ব করতে পারি।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্ট সদস্য জেরি বাজেক বলেন, ‘এ দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইইউকে ধরে রাখতে হবে এবং যেকোনো নতুন বিভক্তি পরিহার করা উচিত।’
এর মাধ্যমে সোভিয়েত অধিকৃত পূর্ব অংশকে মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনীর অধিকৃত পশ্চিম অংশ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে পরাজিত জার্মানির বার্লিন এভাবে দুই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
পশ্চিমি বিশ্বের মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও বহুগুণ আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের আকর্ষণে পূর্ব জার্মানি থেকে বার্লিন প্রাচীর অতিক্রম করতে গিয়ে রক্ষীদের গুলিতে দেয়ালেই অন্তত ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়। সার্বিকভাবে পূর্ব জার্মানির বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে পশ্চিম জার্মানিতে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়।
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘনিয়ে এলে পূর্ব ইউরোপে গণতন্ত্রমুখী অভিযাত্রার মধ্যে ১৯৮৯ সালে ভেঙে ফেলা হয় বার্লিন প্রাচীর। এখন ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই প্রাচীরের মাত্র তিন কিলোমিটারের মতো অংশ ইতিহাসের স্মারক হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.