নিস্তরঙ্গ ক্রিকেটেও এত আলো!

খেলা-টেলা নেই, বড্ড ম্যাড়মেড়ে সময় যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। এ নাম, ও-নাম করে সম্ভাব্য কোচ নিয়ে পরিস্থিতিটা এখন এমনই অস্পষ্ট, নির্দিষ্ট করে কারও নাম লিখতে যাওয়াটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতোই অনিশ্চিত চ্যালেঞ্জ। স্টুয়ার্ট লর কোচ হওয়া একরকম নিশ্চিত, কিন্তু চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার ঝুঁকি নেবে কে!
ক্রিকেটের প্রতি দুর্নিবার কৌতূহল কি তাহলে ঘুমিয়ে পড়বে? মোটেও না। সামনে যা আছে, তা থেকেই খুঁজে নিতে হবে জানানোর মতো কিছু। ৩২ ক্রিকেটারকে নিয়ে চলমান কন্ডিশনিং ক্যাম্পটাও তাই সাংবাদিক আর ক্যামেরার মনোযোগ পাচ্ছে বেশ। তাতে ক্রিকেটাররাও বোধ হয় চনমনে থাকতে পারছেন। বিসিবির চিকির্যাসক দেবাশিষ চৌধুরী তো কাল বললেনই, ‘সবাই খুব উপভোগ করছে কন্ডিশনিং ক্যাম্প।’
এমনিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প খবরের বড় কোনো ক্ষেত্র নয়। ফিটনেস বাড়ানোর কারবার যেহেতু, এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ইনজুরিতে পড়ে কারও খবর হওয়ার আশঙ্কা কমই। কে যোগ দিলেন, কে দিলেন না, ক্যাম্পে কী হবে, মাসব্যাপী এই ক্যাম্প কতটা কাজে আসবে—সেসব কৌতূহল প্রথম দিনেই মিটে গেছে। তার পরও ক্রিকেটের খবর তো কিছু চাই! আগের দিন মুশফিকুর রহিমের পর কাল সেই ‘খবরের’ জোগান দিলেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।
‘খবর’ মানে ‘ব্রেকিং নিউজ’ জাতীয় কিছু না। ক্যাম্প, পারফরম্যান্স ইত্যাদি নিয়ে গর্যাবাঁধা কথাবার্তাই। প্রথম দিনের মতো আশরাফুল কাল আবার আওড়ালেন, ‘এর আগে এ ধরনের ক্যাম্প করার সুযোগ হয়নি। এই ক্যাম্প সবারই কাজে লাগবে, বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের।’ খুবই সত্যি কথা। ফিটনেস বাড়ানো এমনিতেই জরুরি, তার ওপর লম্বা ছুটি কাটিয়ে ফেরা খেলোয়াড়দের বাড়তি মেদ ঝরানোর ব্যাপারও তো আছে! এমন একটা ক্যাম্প আসলেই খুব দরকার ছিল। আর সবকিছু বাদ দিয়ে হলেও ক্রিকেটকে সংবাদ শিরোনাম করার জন্য তো বটেই।
৩২ ক্রিকেটারকে দুই ভাগে ফেলে প্রতিদিন দুই সেশনে হচ্ছে ক্যাম্প। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা প্রথম সেশন, এরপর সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা। ফিটনেসের জন্য আশরাফুলেরও হয়তো এমন একটা ক্যাম্প দরকার ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক যা পারফরম্যান্স, তাতে শরীরের চেয়ে মনের ফিটনেসও তাঁর জন্য কম জরুরি নয়। আশরাফুল সেই ফিটনেসের রসদ খুঁজে পাচ্ছেন ‘এ’ দলের হয়ে করে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে, ‘প্রায় দুই বছর ধরেই আমার পারফরম্যান্স ধারাবাহিক নয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। অন্য ইনিংসগুলোতেও শুরুটা ভালো ছিল। এই সফরের পারফরম্যান্স আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।’
আত্মবিশ্বাসী হয়ে তিনি আবার আগের মতো মারকাটারি ব্যাটিং শুরু করে দেবেন, এটা ভেবে থাকলে আপনি আশরাফুলের মতোই ভুলের গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়েছেন। আশরাফুল আসলে বলছেন নিজেকে বদলানোর কথা, ‘একটা সময় ছিল যখন দর্শকদের প্রত্যাশাটা মাথায় রাখতাম এবং বেশি বেশি তুলে মারতে যেতাম। সেটাই আমার পারফরম্যান্সের অবনতির কারণ। এখন থেকে চেষ্টা করব সেট হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন আর না করতে।’
বদলে যাওয়ার চেষ্টা আশরাফুল আগেও করেছেন এবং উপহার দিয়েছেন হতাশা। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভুল শুধরে ফিরে আসার। সর্বশেষ দেওয়া প্রতিশ্রুতিটাকে তাই খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে অপেক্ষায় থাকাই ভালো, দেখাই যাক না আশরাফুল কী করেন। তবে আপাতত একটা ধন্যবাদ তিনি পেতে পারেন—ক্রিকেটের হয়ে একটা ‘খবর’ তো দিলেন!
ভালো কথা, আশরাফুলকে ধন্যবাদ দেওয়া কর্তব্য বিসিবিরও। ‘সাফল্যমণ্ডিত’ বিশ্বকাপের গায়েও যখন এক-আধ আঁচড় কলঙ্কের দাগ দেখছেন অনেকে, কিংবা যখন কোচ নিয়ে খোঁচাখুঁচির পরিণতির দায় ঘুরেফিরে গিয়ে বোর্ডের গায়েই পড়ে, সবার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখায় আশরাফুলও তো একটু অবদান রাখলেন!

No comments

Powered by Blogger.