সাকিবকে শাহরুখের শুভ কামনা

শাহরুখ খান কি কখনো পেরেছেন জুহি চাওলাকে এতটা মুগ্ধ করতে? ইয়েস বস কিংবা ফিরভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানির শুটিং স্পটে কিং খানের কোনো অ্যাকশন দেখে কি কখনো বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠেছেন জুহি, কিংবা দুই হাতে ঢেকে ফেলেছেন মুখ?
মনে হয় না। রুপালি পর্দায় শাহরুখের চেয়ে জুহি কম কি! জুহিদের ছাড়া সেখানে শাহরুখরা অচল, শাহরুখরা না থাকলেও আবার জুহিরা আলো ছড়ান না। এদিক দিয়ে সাকিব আল হাসান বোধ হয় শাহরুখকেও ছাড়িয়ে গেলেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে সাকিবের বিশাল টার্ন দেখে জুহির সে কী বিস্ময়! চোখের সামনে ঘটনা ঘটছে, অথচ বলিউড-কন্যার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না অত বড় টার্ন কেউ করাতে পারে। টিভি পর্দায় পরপর ভেসে উঠছিল সাকিবের ঘর্মাক্ত চেহারা আর জুহির বিস্ময়মাখা মুখ। সাকিব হাসছেন, জুহিও...আইপিএল তো নয়, যেন বলিউডি ছবির ট্রেলার! নায়কের নাম সাকিব আল হাসান।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) আইপিএল শেষে আজ দেশে ফিরে আসছেন বাংলাদেশের সাকিব। ফেলে আসছেন গৌতম গম্ভীরের দল, ফেলে আসছেন শাহরুখ-জুহিদেরও। ‘লাজুক’ জুহির সঙ্গে ‘নায়ক’ সাকিবের কথাবার্তা এই কয়দিনে ‘হাই-হ্যালো’, ‘কেমন আছ’র বেশি না গড়ালেও শাহরুখ খান শেষ দিকে ভীষণই গদগদ। পরশু শেষ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ককে বলিউড সম্রাটের অভিনন্দন, ‘অনেক ভালো খেলেছ। সামনের বার এর চেয়েও ভালো খেলবে আশা করি। তবে আমরা চাই দেশের হয়ে তুমি আরও অনেক বেশি ভালো খেলো।’
আইপিএলে কেকেআরের ১৫ ম্যাচের মধ্যে সাকিব খেলেছেন ৭ ম্যাচ। তিন ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে রান করেছেন ৫ বলে ২, ১ বলে অপরাজিত ১ ও ১৬ বলে ২৬। বোলিংয়ে ৭ ম্যাচে মাত্র ৬.৮৬ ইকোনমিতে ১১ উইকেট—এমন পারফরম্যান্সের পর সাকিবকে তো ওভাবেই বিদায় দেওয়ার কথা শাহরুখের। সাকিব নিজেও সন্তুষ্ট নিজের এই পারফরম্যান্সে।
টেলিফোনে আইপিএল-অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে অবশ্য কাল শাহরুখ-জুহির চেয়ে সতীর্থদের কথাই বেশি বললেন সাকিব, ‘অন্য জায়গায়, অন্য রকম পরিবেশে খেলার সুযোগ পেলাম—এই দেড় মাস খুবই ভালো কাটিয়েছি। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি। বিভিন্ন জিনিস শেখাটাকেই বড় করে দেখছি আমি।’ কী শিখেছেন সেটা বিস্তারিত না বললেও বোঝা গেল, সাকিবের শিক্ষার আসল ক্লাসটা হয়েছে ড্রেসিংরুমে, ‘ক্যালিস, গম্ভীরদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে সময় কাটালেও অনেক কিছু শেখা যায়।’
দেড় মাসে কেকেআরের সবার সঙ্গেই ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। তবে সাকিব আলাদা করে বললেন ইউসুফ পাঠান ও ইকবাল আবদুল্লাহর কথা, ‘বন্ধুত্ব সবার সঙ্গেই হয়েছে। তবে ইউসুফ পাঠান আর ইকবাল আবদুল্লাহর সঙ্গে বেশি সময় কাটত। বাইরে-টাইরে গেলেও ওদের সঙ্গেই গেছি।’
গত বছরের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের পর থেকে টানা ক্রিকেটের মধ্যেই আছেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজ, বিশ্বকাপ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ—এরপর আইপিএলে কাটালেন দেড় মাসের মতো। আইপিএল শেষেও বিশ্রাম নেই। ঢাকায় এসেই দৌড়াতে হবে ইংল্যান্ডের ভিসার জন্য। আর ভিসা হাতে পাওয়া মাত্র উঠে যাবেন বিমানে, নতুন মিশন উস্টারশায়ারের হয়ে ইংলিশ কাউন্টিতে খেলা। ‘বিশ্রাম আর হলো কই? ভিসা হয়ে গেলে আগামী মাসের ১/২ তারিখেই ইংল্যান্ডে রওনা দেব। জুলাইয়ের ১৫/১৬ তারিখে ফিরে জিম্বাবুয়ের ক্যাম্প, এরপর জিম্বাবুয়ে সফর। টানা খেলার মধ্যে থাকতে হবে আগামী কয়েকটা মাসও’—কথাগুলো শোনার সময় অবশ্য কোনো ক্লান্তির খোঁজ পাওয়া গেল না সাকিবের কণ্ঠে। হাসছিলেন, খেলাটা উপভোগের হাসি।

No comments

Powered by Blogger.