মহারণের আগে

সময় যত গড়াচ্ছে, ততই রোমাঞ্চ জাগছে। আগামীকালই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের নির্ধারক। ম্যাচটি নিয়ে টুকরো কিছু খবর...

ভুলে যাওয়া
পারলে ২০০৯ রোমের ফাইনালটি ইতিহাসের পাতা থেকেই মুছে ফেলত ম্যানইউ। সেটা হওয়ার উপায় যেহেতু নেই, আপাতত খেলোয়াড়দের মন থেকে সেটা মুছে ফেলতে চাইছেন অ্যালেক্স ফার্গুসন। মিডফিল্ডার মাইকেল ক্যারিক যেমন বলছেন, ‘সত্যি বলছি, ২০০৯ সালে কী হয়েছিল, তাতে কিছুই যায় আসে না। এবারেরটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ম্যাচ। একেবারেই আলাদা। আমরা তাই শনিবারের ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি। আমরা আমাদের শক্তি অনুযায়ী খেলব, চেষ্টা করব জেতার। বার্সেলোনাকে তাদের শক্তির জন্য সমীহ করতে হবে। কিন্তু আমাদেরও তা-ই করা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দলটাও অনেক ভালো। আগেও বলেছি, ওই রাতে কে ভালো খেলল, সেটাই আসল ব্যাপার।’
কিন্তু চাইলেই তো আর ২০০৯ সালের ফাইনালের প্রসঙ্গ এড়ানো যায় না। সাংবাদিকেরা খুঁচিয়ে কথা বের করবেনই। রিও ফার্ডিনান্ডকে যেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল, গতবারের ওই ফাইনালে লিওনেল মেসির সেই হেড থেকে করা গোল নিয়ে। মেসি অবিশ্বাস্যভাবে লাফিয়ে উঠেছিলেন তাঁর চেয়ে এক ফুট লম্বা এডউইন ফন ডার সারের ওপর। গলা খাঁকারি দিয়ে ফার্ডিনান্ড উত্তর দিলেন, ‘সেটা একটা দুর্দান্ত ক্রস আর দুর্দান্ত হেডার ছিল। কিন্তু শুধু এ রকম গোল কেন, আপনি কোনো গোলই নিজের জালে ঢুকতে দিতে চাইবেন না। এবার আশা করি, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ফলই হবে।’ ফার্ডিনান্ডের আশা পুরো ম্যানইউরই আশা। এএফপি।

বিদায়, দাদু!
ফন ডার সারকে ‘স্যার’ বলে ডাকাই যায়। ফ্যাবিও-রাফায়েলদের চেয়ে তিনি তো বয়সে ঠিক দ্বিগুণ বড়! ম্যানইউয়ের সতীর্থরা তাঁকে আদৌ স্যার বলে ডাকেন কি না কে জানে, তবে হল্যান্ড দলে এই গোলরক্ষককে অনেকে দাদু বলেই ডাকেন। সেই দাদুর বিদায়ী ম্যাচটাও আগামীকাল। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ফন ডার সারের ক্যারিয়ারেরও ‘ফাইনাল’।
বয়স ৪০ হলেও গোলপোস্টের নিচে এখনো ক্ষিপ্র। অতন্দ্রপ্রহরী। এ বছর তাঁর ফর্মও খুব ভালো। এতটাই ভালো, চাইলে আরও একটা মৌসুম খেলে যেতেই পারতেন। এমন একটা ভাবনা তাঁর মনেও ভিড় করেছিল। দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝেড়ে ফেলেছেন দ্বিধার ধুলো। আর তাই আগামীকালের ম্যাচের আগে, ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজের ৮২০তম ম্যাচটির আগে ফন ডার সার বলছেন, কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর, ‘পেশাদার ফুটবলার অনেকেই হতে চায়। কিন্তু হতে পারে খুব কম জনই। আর তাই এতগুলো বছর ধরে এই পর্যায়ে খেলার পর ক্যারিয়ার শেষ করতে পারা দুর্দান্ত কিছু।’
১৯৯০ সালে আয়াক্সের হয়ে অভিষেক। দীর্ঘ ২১ বছর শীর্ষ পর্যায়ে খেলার পর ফুটবলকে বিদায় জানানোটা কষ্টের তো বটেই। এত দিনের ছড়ানো আবেগের শেকড় তো এক ঝটকায় উপড়ে ফেলা যায় না। একটু কষ্টও কি হচ্ছে না তাঁর! হলেও সেটা লুকিয়ে রাখলেন সযতনে। বললেন, এই ম্যাচের আগে একটু টেনশন হচ্ছে। এবং ফাইনাল বলে সেই টেনশনের দরকারও আছে। এএফপি।

‘চাপ আবার কী!’
বয়স মাত্র ২৩। চেহারায় এখনো যেন কোথায় মিশে আছে ‘বালক’-এর ছায়া। এই মেসিই বার্সেলোনার মতো একটা দলের প্রাণভোমরা হয়ে আছেন। এ তো অন্তহীন এক চাপ। প্রতি ম্যাচেই মেসির কাছে জাদুকরি কিছু আশা করে সবাই। এই চাপ কি জোয়াল হয়ে চেপে বসে না তাঁর কাঁধে!
মেসি দিলেন একেবারেই ভিন্ন উত্তর। প্রত্যাশার চাপকে দেখেন অন্যভাবে, ‘এটা তো সম্মানের। এটা মোটেও আমার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে না। আমার, আমার সতীর্থদের খেলা মানুষ উপভোগ করে, এটা দেখতে ভালোবাসি। তাদের জন্যই আমি শিরোপা জিততে চাই।’
চাপকে জয় করার মন্ত্রও জানা আছে তাঁর, ‘আমি সবকিছুই সহজভাবে নিই। নির্ভার থাকি, কারণ সবকিছুই অনেক দিন থেকে আমাদের পক্ষে যাচ্ছে।’ একটা জানা তথ্যই আবারও জানালেন, ‘আমি আজীবন বার্সায় থেকে যেতে চাই।’ একটা কম জানা তথ্যও বেরোল তাঁর মুখ থেকে, ম্যানইউয়ের তো বটেই, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা খুব একটা দেখেন না, ‘সত্যি বলতে কি, আমি খুব একটা খেলা দেখি না। তবে আমি জানি, ম্যানইউ খুবই ভালো দল। শক্তিশালী একটা লিগের যোগ্য চ্যাম্পিয়ন।

No comments

Powered by Blogger.