বাগবোকে দ্রুত পদত্যাগের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

আইভরি কোস্টের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট লরা বাগবো দেশটিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। চলমান সংকট নিরসনে তাঁকে দ্রুত পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ আহ্বান জানান।
এদিকে আইভরি কোস্টের প্রধান শহর আবিদজান দখলে নিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওয়াতারা ও লরা বাগবোর অনুগত বাহিনীর মধ্যে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আবিদজানের বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে ফরাসি বাহিনী। সেখানে আরও ৩০০ ফরাসি সেনা পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরের কাছে একটি সেনাশিবিরে অন্তত এক হাজার ২০০ বিদেশি নাগরিককে সেনারা সুরক্ষা দিচ্ছেন। ফরাসি সেনাদের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে হিলারি ক্লিনটন বলেন, বাগবোর সামনের পথ পরিষ্কার। পদত্যাগ করা ছাড়া তাঁর আর কোনো বিকল্প নেই। চলমান সহিংসতা বন্ধে বাগবোর উচিত এখনই পদত্যাগ করা। আবিদজান শহরের কেন্দ্রস্থলে গত শনিবার বাগবো ও ওয়াতারার অনুগত বাহিনীর তৃতীয় দিনের তুমুল লড়াইয়ের পর এ আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে বাগবোর প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে এর আগে বাগবো এ ধরনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে বলে আসছিলেন, জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছে। তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট। অতএব পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও বিবিসির মাধ্যমে বাগবোর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাগবোকে পদত্যাগ করতে আমি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। বাগবোর উচিত, শিগগিরই নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাগবো চলে যাওয়ার পর দেশটির আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ওয়াতারা কাজ শুরু করবেন বলে আমি আশাবাদী।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে ওয়াতারা বিজয় লাভ করেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব তাঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বাগবো ক্ষমতা ছাড়েননি।
আইভরি কোস্টের প্রধান অর্থনৈতিক রাজধানী আবিদজানে গত শনিবারও দুই পক্ষের সেনাদের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে কামানের গোলার শব্দ শোনা গেছে। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের সদর দপ্তর দখলে নিতে ওয়াতারার অনুগত বাহিনী লড়াই করছে। এ ছাড়া আগবান সেনা-ঘাঁটি এলাকায় কামান ও মেশিনগানের গুলির শব্দ শোনা গেছে।
দুই পক্ষের চলমান লড়াইয়ে হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াতারার অনুগত আহত সেনাদের চিকিৎসা দিতে আবিদজান শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বাগবোর অনুগত বাহিনীর ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের চার সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন। এর আগে প্রতিবেশী কোকোডি এলাকায় বাগবো বাহিনী জাতিসংঘের একটি গাড়িবহরে হামলা চালায়। এ সময় পাল্টা হামলায় বাগবোর অনুগত পাঁচ সেনা আহত হন।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে বাগবো অনুগত এক সেনাকে একটি বিবৃতি পড়ে শোনাতে দেখা গেছে। বিবৃতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সেনাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
অন্য একটি ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাগবোর অনুগত তরুণ মিলিসিয়ারা আবিদজানস হ্রদের ওপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু দখলে নিয়েছে।
দেশটির রাজধানী ইয়ামাউসোক্রো থেকে বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিং জানান, ভয়ানক লড়াই চলছে। এর ব্যাপকতা অনুমান করা দুরূহ। ওয়াতারার অনুগত বাহিনীর দাবি, তাঁরা অভিযানের চূড়ান্ত পর্বে আছেন। কিন্তু তাঁদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.