রাজা হয়ে উঠলেন যুবরাজ

অভিষেকের সঙ্গে পরশু অনেক দিক থেকেই মিল থাকল। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আইসিসিরই টুর্নামেন্টে—২০০০ সালের নকআউট বিশ্বকাপে। নিজের অভিষেক ইনিংসে ৮৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে হারিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। সেদিন ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পেয়েছিলেন রবি শাস্ত্রীকে। যুবক-রাজের ১২টি চার দেখার পর শাস্ত্রীর জিজ্ঞাসা ছিল, ‘কী খেয়ে এত জোর বাড়ালে ভাই?’ ১৯ বছর বয়সীর জড়তাহীন চটুল জবাব ছিল, ‘আমি আসলে ভেজিটেরিয়ান। মাংস একদমই খাই না।’
যুবরাজ সিং পরশু আসল বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট-সেরা হলেন। এবারও শাস্ত্রী উপস্থাপক। কিন্তু এবার যুবরাজ ১১ বছর আগের সেই দিনটার মতো দ্রুত উত্তর দিলেন না। কথাগুলো একটু যেন এলোমেলোও। আসলে হূদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা অনুভূতির ভার বহন করে সেই সাধ্য বুঝি ভাষার নেই!
অবশ্য প্রাথমিক উচ্ছ্বাসের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার পর ‘ফর্মে’ ফিরেছেন। পরশু ধোনির সঙ্গে জুটি বেঁধে সংবাদ সম্মেলনে আসার পর বেশ কৌতুক-টৌতুক করলেন। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট অর্জনটি কাকে উৎসর্গ করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে যুবরাজ বললেন, ‘দুঃখিত বন্ধুরা, আপনাদের মনমতো উত্তর পাচ্ছেন না। এটা আমার প্রেমিকা কিংবা বাগদত্তাকে নয়; আমি উৎসর্গ করছি শচীন টেন্ডুলকারকে।’
নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেললেন ব্যাটিং রেকর্ডের বরপুত্র। এবার পুরো দলই ধনুকভাঙা পণ করেছিল, এই কিংবদন্তিকে উপহার হিসেবে বিশ্বকাপটা এনে দিতেই হবে। পরশু ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার হাতে নিয়েই যুবরাজ বলেছেন, ‘এটা শচীনের জন্য, দলের বাকি সবার জন্য।’
৩৬২ রান আর ১৫ উইকেট—ব্যাটে-বলে স্বপ্নের মতো কাটল তাঁর। বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের রেকর্ডও এটি। ২৮ বছর পর ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মূল কান্ডারি হয়ে থাকলেন এই বাঁহাতি। যুবরাজও এদিন গাইলেন পূর্ণতারই গান, ‘এই বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। কিন্তু এটা সত্যিই স্পেশাল।’
‘বড়’ বিশ্বকাপই তাঁর জন্য এটি তৃতীয়। প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০০৩-এ। প্রথমবারই গিয়েছিলেন শিরোপার একদম কাছাকাছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রানার্সআপের সান্ত্বনা নিয়ে ফিরতে হয়েছে। যুবরাজ জানালেন, এক অর্থে জোহানেসবার্গের ফাইনালটি পরশু তাদের জন্য হয়ে ছিল ‘প্রেরণা’, ‘আমরা সেবার অনেক ভুল করেছিলাম। সেই ভুলগুলো এবার করিনি। পরের ব্যাটিং করা মানে অনেক চাপ। কিন্তু গৌতি, এমএস অসাধারণ খেলেছে। শুরুতে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও তারা স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছে।’
এই স্বাভাবিক খেলাতেই ভারতের সাফল্য লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন তিনি। আর এ কারণে এর আগে টুর্নামেন্টে চারবারের ম্যাচসেরাকেও এদিন পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকতে হলো। অবশ্য বল হাতে দুটো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন।
অথচ এই যুবরাজই মাত্র কয়েক মাস আগে বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। অবসরও নিতে চেয়েছিলেন চূড়ান্ত হতাশার দিনগুলোয়। ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন দেখে এসেছেন আগেও। কঠিন সময়গুলোয় অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলী ও ধোনির অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন। কৃতজ্ঞ যুবরাজ ‘দাদা’ আর ‘এমএস’কেও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি।
আসল ধন্যবাদ তো তাঁরই প্রাপ্য। সোয়া শ কোটি মানুষ যেন অনুচ্চারে কোরাস তুলছে, ‘ধন্যবাদ যুবি!’

No comments

Powered by Blogger.