আবেগে উচ্ছ্বাসে চিলি

টানা প্রায় ২২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে শেষ হলো চিলির ধসে পড়া খনি থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারকাজ। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ শ্রমিক হিসেবে খনি থেকে বের করে আনা হয় লুইস উরজুয়াকে। আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় একটি সফল অভিযান শেষ করার উৎসব।
সফলভাবে উদ্ধারকাজ শেষ করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ও পোপ ষোড়শ বেনিডিক্টসহ বিশ্বনেতারা চিলিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদেরও।
গতকাল স্থানীয় সময় রাত নয়টা ৫৫ মিনিটে শেষ ব্যক্তি হিসেবে উরজুয়াকে বের করে আনা হয়। শ্রমিকদের উদ্ধারে বিশেষ খাঁচা ‘ফিনিক্স’ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকর্মীরা তাঁকে জাতীয় পতাকা দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত শ্রমিকদের স্বজন, উদ্ধারকর্মী, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ হাজারো মানুষ একসঙ্গে চিলির জাতীয় সংগীত গেয়ে ওঠেন। বেজে ওঠে বিশেষ সাইরেন। আকাশে রংবেরঙের ৩৩টি বেলুন উড়িয়ে সবাই উল্লাস প্রকাশ করেন।
গত বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে খনি থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বের করে আনা হয় ৩১ বছর বয়সী ফ্লোরেনসিও অ্যাভালোসকে। এর প্রায় ২২ ঘণ্টা পর শেষ শ্রমিক হিসেবে ৫৪ বছর বয়সী উরজুয়াকে উদ্ধার করা হয়। উরজুয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্টদেরসহ গোটা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’ এ সময় সেখানে উপস্থিত চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি উরজুয়াকে সত্যিকারের অধিনায়ক বলে অভিহিত করে বলেন, আটকে পড়া শ্রমিকেরা সাহস আর বিশ্বাসের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। পিনেরা বলেন, ‘সারা বিশ্ব যা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমরা সেই কাজটি দারুণভাবে শেষ করতে পেরেছি। চিলি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। বহির্বিশ্বেও আমাদের মর্যাদা বেড়েছে।’
চিলির খনিবিষয়ক মন্ত্রী লরেন্স গোলবর্ন উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, উদ্ধারকর্মীদের দক্ষতার কারণে উদ্ধার অভিযানে সময় অনেকটা কম লেগেছে। একেকজনকে বের করে আনতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগার কথা থাকলে গড়ে ৪৫ মিনিটের মতো লাগে। মন্ত্রী বলেন, ‘শুরুতে উদ্ধারকাজ শেষ করতে মোট ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগার কথা বলা হলেও আমরা ২১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটে তা সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
মন্ত্রী লরেন্স জানান, সবচেয়ে বয়স্ক শ্রমিক মারিও গোমেজকে (৬৩) উদ্ধারে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ফুসফুসে সমস্যা থাকার কারণে তাঁকে বিশেষ সতর্কতায় উদ্ধার করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেইমি মানালিস জানান, শ্রমিকদের মধ্যে একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। দুজন দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন। তবে উদ্ধার হওয়া প্রথম ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থাই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো রয়েছে।
খনিশ্রমিকদের তুলে আনার পর সবাইকে একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক গিলার্মো সুইট জানান, দীর্ঘদিন খনির মধ্যে থাকার কারণে এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শ্রমিকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই উদ্ধার তৎপরতায় সারা বিশ্বের মনোযোগ ছিল। উদ্ধারকাজে শুধু উদ্ধারকর্মী বা চিলির সরকারের দৃঢ়প্রতিজ্ঞার বিষয়টিই ফুটে ওঠেনি, এই ঐক্য ও সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা থেকে বিশ্বের জনগণ অনুপ্রাণিত হতে পারে।
চিলির উত্তরাঞ্চলের সান হোসে সোনা ও তামার খনি ধসে ৩৩ জন শ্রমিক খনির দুই হাজার ৪১ ফুট (৬২২ মিটার) নিচে আটকা পড়েন। গত ৫ আগস্ট ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.