প্রবাসী-আয় বাড়াতে দক্ষ শ্রমশক্তি পাঠাতে হবে

বর্তমানে দেশের প্রায় এক কোটি লোক বিশ্বের ১৩০টি দেশে কর্মরত। তাঁরা এখন বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার পাঠান। আর ২০১৫ সালের মধ্যে প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ তিন হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রচলিত বাজার সীমিত হয়ে পড়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে অন্যান্য দেশে অধিক পরিমাণে দক্ষ লোক পাঠানো ছাড়া এ পরিমাণ আয় আসবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘মানবসম্পদ রপ্তানির সম্ভাবনা এবং নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সেমিনারে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী।
নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. জাফর ও জনশক্তি ব্যুরোর মহাপরিচালক খুরশিদ আলম চৌধুরী।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রচলিত শ্রমবাজারগুলোতে বাংলাদেশের অধিক পরিমাণে শ্রমিক কাজ করায় বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে এসব প্রচলিত বাজারের পরিবর্তে দক্ষ শ্রমিকের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
মোশাররফ আরও বলেন, সরকার দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে দেশের সব জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করবে। ইতিমধ্যে ৩৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। আগামী দুই বছরে আরও ৩১টি স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশে প্রশিক্ষিত সেবিকা পাঠানোর জন্য নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমানে সরকারি হিসাবে বিদেশে প্রায় ৭০ লাখ লোক কাজ করেন। কিন্তু অবৈধভাবে আরও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিদেশে কর্মরত। অথচ তাঁদের জন্য সরকারের ব্যয় সামান্য। তিনি বলেন, বায়রার অসহযোগিতার কারণে বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যয় কমানো যাচ্ছে না।
জাফর আহমেদ খান বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় হয়, যা কমানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু হলে বিদেশগামীদের উপকার হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা রপ্তানি খাতে তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার আয় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষ লোক না পাঠালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি প্রবাসী-আয় বাড়ানোর জন্য অধিক পরিমাণে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশ যাওয়ার ব্যয় কমানোর তাগিদ দেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী, বিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শরীফ এম আফজাল হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আখতারুজ্জামান মঞ্জু, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নজিবুর রহমান, নাগিবুল ইসলাম দীপু, মনোয়ারা হাকিম আলী, উইমেন চেম্বারের পরিচালক আঞ্জুমান সালাউদ্দিন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.