বাজেটের পর প্রথম লেনদেন দিবস চাঙা

২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর প্রথম লেনদেনের দিবসে গতকাল রোববার দেশের শেয়ারবাজার ছিল বেশ চাঙা। এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাবে বেড়েছে মূল্যসূচক ও লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৩৩৩ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির ইতিহাসে এটি এখন সূচকের সর্বোচ্চ পর্যায়। এর আগে এ পর্যায়ে সূচক কখনো ওঠেনি। এদিন স্টক এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২০৫ কোটি টাকার।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৩৯৪ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬১ কোটি টাকার।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, বাজেট ঘোষণার আগে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার জন্য করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বাধ্যতামূলক এবং ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর করারোপের গুঞ্জন ছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। মূলত এরই প্রভাব পড়েছে বাজারে।
যোগাযোগ করা হলে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, বাজার পর্যবেক্ষণে ব্যাংক ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশি ঝোঁক লক্ষ করা গেছে। তাঁরা হয়তো মনে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপ করায় প্রতিষ্ঠানগুলো করের বোঝা এড়াতে এ বছরের মধ্যে লাভ তুলে নিতে চাইবে। আর এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধবার্ষিক ফলাফল খুব ভালো হবে। হতে পারে এ ভাবনা থেকেই বিনিয়োগকারীরা এ খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন।
বিশ্লেষকদের অনেকে আবার মনে করছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ ৩০ জুনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যাঁরা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিতে চান তাঁদের এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। এটিও বাজার বাড়ার একটি বড় কারণ।
তবে আরিফ খান বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষই নিয়েছে। তাই এ খাতে খুব বেশি টাকা ঢুকছে বলে মনে হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন মাত্র ১৭ জন। তাঁদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
তবে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর উৎসে আয়করের প্রস্তাবিত হার না কমালে ভবিষ্যতে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি হারে লেনদেন মাশুল নেবে। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের লেনদেন-খরচ বাড়বে।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে লেনদেনের ওপর উৎসে কর ০.০২৫ থেকে চারগুণ বাড়িয়ে ০.১০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইউসিবিএল: অবশেষে মূল বাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) শেয়ার। মামলার কারণে নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত করতে না পারায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটিকে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তবে সম্প্রতি বকেয়া এজিএম সম্পন্ন করায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি কোম্পানিটিকে মূল বাজারে লেনদেনের অনুমতি দিয়েছে।
আর এ কে সিরামিকস: গতকাল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে আর এ কে সিরামিকসের শেয়ার একযোগে লেনদেন শুরু হয়েছে।
সিএসইর প্রতিক্রিয়া: এদিকে সিএসইর সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ এক বিবৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর করারোপ না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বাজেটের সাফল্য অর্জনে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।

No comments

Powered by Blogger.