বিশ্বকাপের ট্রফিতে কত সোনা

ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মার্টিন পলিয়াকফ। ঝাঁকড়া চুলের ভদ্রলোকের এমনিতে ফুটবলের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতেছিল, সেটা মনে থাকলেও এরপর বিশ্বকাপের আর কোনো ম্যাচই দেখা হয়নি তাঁর। তবে পলিয়াকফ ঠিক করেছেন এবার কিছু ম্যাচ দেখবেন। তাও বিশ্বকাপ বলে নয়, এই রসায়নবিদের যত আগ্রহ বিশ্বকাপের ট্রফিটা ঘিরে।
বিশ্বকাপ জেতার পর চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক আর খেলোয়াড়েরা মিলে যেভাবে মাথার ওপর তুলে ট্রফি ঝাঁকান, সেটা দেখে রীতিমতো বিস্মিত পলিয়াকফ। ৭০ কেজি ওজনের একটা স্বর্ণখণ্ড তাঁদের হাতে এতটা হালকা হয়ে ধরা দেয় কীভাবে, সেটাই তাঁর বোধগম্য নয়। হ্যাঁ, পলিয়াকফ গবেষণা করে বের করেছেন, বিশ্বকাপের ১৪ ইঞ্চি (৩৬ সেমি) উঁচু ট্রফিটা যদি সত্যি সত্যি নিরেট সোনা দিয়ে বানানো হয়ে থাকে, তাহলে সেটার ওজন হবে কমপক্ষে ৭০ কেজি (১৫৪ পাউন্ড)। আর ৭০ কেজি ওজনের স্বর্ণখণ্ড নিয়ে যেহেতু ও রকম লাফালাফি করা সম্ভব নয়, অধ্যাপক সাহেব নিশ্চিত, ওটা মোটেও নিরেট সোনার তৈরি নয়। এর ভেতরটা অবশ্যই ফাঁপা।
ফিফার দাবি, ১৯৭৪ সাল থেকে চলে আসা বিশ্বকাপের বর্তমান ট্রফির ধাতব অংশটা ‘নিরেট সোনার’ তৈরি। বিবিসি নিউজ ওয়েবসাইটে তারা ট্রফির বর্ণনা দিয়ে বলেছে, ট্রফির ওজন ৬.১৭৫ কেজি এবং এর মধ্যে ‘১৮ ক্যারেট নিরেট সোনা’ আছে ৪.৯ কেজি। আর ট্রফির দ্বিস্তরবিশিষ্ট বেদিটি বানানো বিশেষ পাথর দিয়ে।
ফিফার ওই ‘নিরেট সোনা’র দাবি নিয়েই প্রশ্ন পলিয়াকফের। তাঁর মতে, ‘নিরেট’ বললে বোঝাবে, ট্রফির ধাতব অংশের পুরোটাই সোনা। ওপরে পাতলা সোনার আবরণ আর ভেতরে স্টিল—সে রকম হলে ট্রফিটা আর ‘নিরেট সোনা’র থাকে না। ফিফার দাবি অনুযায়ী যদি বিশ্বকাপের ট্রফি সত্যি সত্যি নিরেট সোনার হয়, সেটা অনেক ভারী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্রিটিশ রসায়নবিদ, ‘সোনা অনেক ভারী। ঘনত্ব বেশি এমন ধাতুগুলোর মধ্যে এটা একটা। আমার হিসাব মতে, ট্রফিটা যদি সত্যি সত্যি নিরেট সোনায় বানানো হয়, ৭০ থেকে ৮০ কেজি সোনা তাতে লাগবেই।’ আর সেটা হলে যেহেতু বিশ্বকাপের ট্রফি কারও একার পক্ষে মাথার ওপর তুলে ঝাঁকানো সম্ভব নয়, পলিয়াকফের ধারণা এর কোনো না কোনো অংশের ভেতরটা অবশ্যই ফাঁপা, ‘আমার ধারণা, ট্রফির ওপরের গ্লোবসদৃশ বলের ভেতরটা সম্ভবত ফাঁপা। সেটা না হলে ওটা অত হালকা হওয়ার কথা নয় যে কেউ মাথার ওপর তুলে নাচাবে।

No comments

Powered by Blogger.