মালয়েশিয়ায় পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র

মালয়েশিয়ায় ইদানীং পরিত্যক্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিষয়টি সে দেশের সরকারকে ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। তবে উপায় বাতলেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা এমন একটি বিশেষ কেন্দ্র (বেবি হ্যাচ) চালু করেছে, যেখানে মায়েরা তাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে নিরাপদে রেখে যেতে পারবেন।
‘অরফ্যান কেয়ার’ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার সেলানগর প্রদেশের পেতালিং জায়ায় এ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মায়েরা তাঁদের পরিচয় গোপন রেখে নবজাতককে এ কেন্দ্রে রেখে যেতে পারবেন। নবজাতককে রাখার জন্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসম্মত একটি কক্ষ রয়েছে। এ কক্ষের সঙ্গে ছোট একটি দরজাও রয়েছে। নবজাতককে রেখে মা চলে যাওয়ার পর দরজাটি বন্ধ হয়ে যাবে। এবং নবজাতকের উপস্থিতির বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি সতর্ক ঘণ্টা বাজবে। ঘণ্টা শুনে কেন্দ্রের কর্মীরা ওই কক্ষে গিয়ে শিশুটির দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
দেশটির নারী ও পরিবার উন্নয়ন-বিষয়ক মন্ত্রী শাহরিজাত আবদুল জলিল বলেছেন, এ কেন্দ্র চালু করার ফলে বেপরোয়া মায়েরা তাঁদের সন্তানদের হত্যা বা রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়ার পথ থেকে ফিরে আসবেন।
তাঁরা সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প একটা সুযোগ পেলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন ধারণা করা উচিত নয় যে এর ফলে বিবাহ-পূর্ব যৌনসম্পর্ক
উৎসাহিত হবে।’
কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৪০৭টি শিশু পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাওয়া গেছে ২৪টি শিশু। রাস্তার পাশে অথবা আবর্জনার স্তূপে এসব নবজাতককে পাওয়া যায়।
গত মার্চে রাস্তার পাশ থেকে একটি নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির বাঁ হাত ছিল মারাত্মক ক্ষতবিক্ষত। একটি কুকুর শিশুটির হাত কামড়েছে। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পরিত্যক্ত নবজাতকদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বমহলে আলোড়ন পড়ে যায়।
অরফ্যান কেয়ার জানায়, পরিত্যক্ত শিশুদের দত্তক নেওয়ার জন্য অনেক মা-বাবা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তালিকায় এ রকম অন্তত ২০০ জন মা-বাবা রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, নবজাতকদের দত্তক নেওয়ার পর তাদের আবার প্রকৃত মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আদনান মোহাম্মদ তাহির বলেন, ‘বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া সন্তানদের নিয়ে অনেক সময় মায়েরা বিপাকে পড়েন। তাঁরা জানেন না যে এ সন্তানকে নিয়ে তাঁরা কোথায় যাবেন, কী করবেন।’
জার্মানি, পাকিস্তান ও জাপানেও এ ধরনের কেন্দ্র চালু রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.