আর লাইসেন্স নয়, কলসেন্টার পল্লি গড়বে সরকার

নতুন করে কলসেন্টারের লাইসেন্স না দিয়ে কলসেন্টার ভিলেজ বা পল্লি গড়ার কথা ভাবছে সরকার।
মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কলসেন্টারের লাইসেন্স দেওয়া হলেও শুধু দক্ষ জনবলের অভাবে এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন খোদ টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ। এ কারণেই সরকার ও কমিশন বিকল্প হিসেবে কলসেন্টার ভিলেজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন শ কলসেন্টারের লাইসেন্স দিলেও বর্তমানে মাত্র ৫৮টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিধিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হলে কলসেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে বিটিআরসি। এ কারণে বাতিল বা ফেরত এসেছে শ দুয়েক লাইসেন্স।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন এবং ভবিষ্যতের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত হিসেবে কলসেন্টারকে বিকশিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবে সরকার।
প্রসঙ্গত, কলসেন্টার মূলত ‘আউটসোর্সিং’ ব্যবসার একটি অংশ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের সহযোগিতা, টেলিমার্কেটিং এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা, অফার ও তথ্য জানানোই কলসেন্টারের কাজ। একে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) বলা হয়। ২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ছিল ৩৮ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালেই তা বেড়ে ৬৪ হাজার ১২০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বিপিওর মধ্যে নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং (কেপিও), লিগাল প্রসেস আউটসোর্সিং (এলপিও), রিসার্স প্রসেস আউটসোর্সিং (আরপিও) ও এডুকেশন প্রসেস আউটসোর্সিং (ইপিও) শীর্ষে রয়েছে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে দেশের মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) বাড়ানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন তথ্যপ্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, কলসেন্টার ভিলেজ গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে রাজধানীর কয়েকটি জায়গাকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান বনানী ও মহাখালীতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) দুটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন। কারণ, কলসেন্টার ভিলেজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং অন্যান্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই থাকতে হবে।
বিটিআরসি আগামী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১০-১৫) মোট পাঁচটি বিষয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুটি তাদের নিজস্ব ভবনকেন্দ্রিক। তৃতীয় প্রস্তাবে রয়েছে বিটিআরসির মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং চতুর্থ প্রস্তাবে রয়েছে মনিটরিং। আর পঞ্চম প্রস্তাব হিসেবে রাখা হয়েছে কলসেন্টার ভিলেজ।
কলসেন্টারের মূল পুঁজি ইংরেজিতে দক্ষতা। ইংরেজিতে দক্ষতা তৈরি করলে আমেরিকা-ইউরোপের চেয়ে ১০ শতাংশ সস্তায় দেশে জনবল পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ। তিনি বলেন, কলসেন্টার-শিল্প বিকাশে সরকার ও কমিশন সব ধরনের সুবিধা দেবে। এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে কলসেন্টার প্রশিক্ষণের বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় কলসেন্টার প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ‘হিরো মাইন্ড মাইন’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে বলে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সমিতির মহাসচিব হামাদুন আই তুরে বলেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ কলসেন্টারের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার, ব্যবসা কৌশলের উন্নয়ন এবং হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যারের ওপর জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ খুব গুরুত্বপুর্ণ। তিনি জানান, বিশ্বের কলসেন্টার ব্যবসায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, সব কলসেন্টারকে এক জায়গায়, এক ছাতার নিচে আনতে পারলে তাদের বিশেষ সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.