ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে মহানগরের স্থানীয় নির্বাচনগুলো বেশি ঘটনাবহুল ও উৎসবমুখর হয়। কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনার নামে দুই হাতে টাকা বিতরণের যে খেলা বরাবর দেখা যায়, সেটা বন্ধ করতে না পারলে দুর্নীতি ও সহিংসতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। পরিণতিতে সামাজিক অবক্ষয় আরও বাড়বে। যদিও সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে হয়—এবং সেটা হওয়াই বাঞ্ছনীয়—তাও এটা বাস্তব যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের অধিকাংশেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকে। তাই প্রার্থী মনোনয়নে দেশের মূল রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও দূরদর্শিতার ওপর আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভালোমন্দ অনেকাংশে নির্ভর করে।
নির্বাচন কমিশনের খসড়া বিধিমালায় নির্বাচনী কার্যক্রমে একজন কাউন্সিলর সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ও মেয়র পদপ্রার্থী সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। কিন্তু ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নামে-বেনামে পোস্টার ছাপিয়ে এলাকাবাসীর আশীর্বাদ চাইতে শুরু করেছেন। অনেক এলাকায় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব শুরু হওয়ার কথা তফসিল ঘোষণার পর থেকে। তার আগে বিধিমালা চূড়ান্ত হতে হবে। অথচ এত সব প্রস্তুতি বাকি থাকতেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে গেছেন। টাকা ব্যয় করতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার। হিসাব শুরুর আগেই যদি প্রার্থীরা বেহিসাবি ব্যয় করে বসে থাকেন, তাহলে ব্যয়ের সীমা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ অর্থহীন হয়ে যায়। নির্বাচন অর্থবহ করার জন্যই এ ধরনের অপরিণামদর্শী কাজ থেকে সংশ্লিষ্ট সবার বিরত থাকা উচিত। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিরও দায়িত্বশীল অবস্থান নেওয়া দরকার। দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন টাকার খেলায় মেতে না ওঠেন, সে ব্যাপারে তাদের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে নির্বাচনে সম্ভাব্য সহিংসতা রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক জরিপে দেখা গেছে, কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, অনেকে সন্ত্রাসের মদদদাতা। এসব লোক প্রার্থী হলে নিজেরা বা অন্য প্রার্থীরা সন্ত্রাসের শিকার হতে পারেন। তাঁদের ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোরও বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যৌথ বৈঠকের আয়োজন করতে পারে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করা ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল—সব পক্ষের অভিন্ন স্বার্থ হওয়া উচিত।
নির্বাচন কমিশনের খসড়া বিধিমালায় মেয়র পদের সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে এনে পরিচিতি সভা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এ ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া ব্যয় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের সীমিতসংখ্যক অফিস ও পরিমিত জনসংযোগ কার্যক্রমের প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া বিধিমালার কোনো কোনো বিষয়ে সরকারের আপত্তি থাকতে পারে; নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সব বিষয়ে দ্রুত মীমাংসা করা দরকার। সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল। এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় তিন বছর আগে। এখন যেন দ্রুত নির্বাচন করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.