মনোযোগ সরাতে ভারতকে দোষারোপ করছে পাকিস্তান

নয়াদিল্লিতে গত মাসে ভারত-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ইসলামাবাদ যৌথ নদীর পানিবণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লির কাছে একটি অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনা হস্তান্তর করেছে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, পানিবণ্টন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা ছাড়া এ পরিকল্পনায় বাড়তি কিছুই নেই। তাঁদের দাবি, এমন এক সময়ে এ পরিকল্পনা হস্তান্তর করা হয়েছে, যখন পাকিস্তানেই যৌথ নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এ দ্বন্দ্ব এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যখন প্রদেশগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে পানি নিয়ে লড়াই করার কথাও বলছে। কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী অভ্যন্তরীণ এই সমস্যার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাইছে বলেই পানিবিষয়ক নিরাপত্তার দোহাই তুলে ভারতকে দোষারোপ করছে।
ভারতীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনায় কোনো সারকথা নেই। দেশটির সরকার অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। সম্প্রতি পাকিস্তানি সংগঠন জামাত উদ দাওয়ার প্রধান হাফিজ সাইদ জনসমাবেশে এ নিয়ে কথা বলেছেন। নয়াদিল্লির দাবি অনুযায়ী, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এই হাফিজ সাইদ।
পাকিস্তানভিত্তিক নিউজ ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকায় ১২ মার্চ প্রকাশিত ‘ওয়াটার: এ প্রিমিনেন্ট পলিটিক্যাল ইস্যু’ শিরোনামের মন্তব্য প্রতিবেদনে আহমাদ রাফি আলম নামের একজন আইনজীবী লিখেছেন, ‘পাকিস্তানে সিন্ধু অববাহিকার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ধু নদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (আইআরএসএ)। ১৯৯১ সালের আন্তঃপ্রাদেশিক পানি চুক্তির আওতায় এ সংস্থাটি গঠন করা হয়। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, সিন্ধুর পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না পাঞ্জাব প্রদেশ। ওদিকে পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি পানি আটকাচ্ছে না তারা।
আইআরএসএর গত দুটি বৈঠকে দেখা গেছে, পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে সিন্ধু, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। তবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রচার করতে চাইছে, ভারতের কারণেই এ পানির সংকট তৈরি হচ্ছে—এমন মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানে সিন্ধু নদের সিংহভাগ পানি ব্যবহারকারী পাঞ্জাব প্রদেশের সঙ্গে সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের দ্বন্দ্ব চরমে রয়েছে। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার চশমা-ঝিলাম ও তৌনসা-পিনজাদ সংযোগখাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করায় অন্য দুটি প্রদেশে সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ কমে যাবে। সিন্ধু প্রদেশের কর্মকর্তারা চশমা-ঝিলাম প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এবং তা বাতিল করার জন্য পাঞ্জাবের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তাঁরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকেও হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সিন্ধু থেকে আরও পানি পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে পাঞ্জাবও।
পাকিস্তানের পানিসংকটের জন্য ভারত যে দায়ী নয়, তা পাকিস্তানের পানিসম্পদমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। গত মাসে পার্লামেন্ট অধিবেশনে রাজা পারভেজ আশরাফ বলেছেন, ঝিলাম ও চেনাব নদীতে বাঁধ নির্মাণের অধিকার ভারতের রয়েছে। পাকিস্তানের পানি বিশেষজ্ঞ এ এন আব্বাসি বলেছেন, সিন্ধু নদের পানি চুরি বন্ধ করা না হলে প্রদেশগুলোর মধ্যে লড়াই শুরু হতে পারে। আরেক পানি বিশেষজ্ঞ নাজির মেনন জানান, সিন্ধু নদ থেকে অতিরিক্ত পানি পেতে পাঞ্জাব ১৬টি ‘ব্যারাজ’ ও দুটি ‘ড্যাম’ নির্মাণ এবং দুটি খাল খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যকার ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ অনুযায়ী পাকিস্তানের অধিকার রয়েছে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর। আর রাভি, বিয়াস ও সুতলেজ নদীর অধিকার ভোগ করবে ভারত। অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনাপত্রে নতুন কোনো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র বা সেচ প্রকল্প সম্পর্কে পাকিস্তানকে যথাসময়ে তথ্য দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চেনাব, ঝিলাম ও সিন্ধুতে প্রায় ৩৩টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে নয়াদিল্লি।

No comments

Powered by Blogger.