ফুটবলের আকাঙ্ক্ষা পাতানোমুক্ত খেলা

ফুটবল অঙ্গনের আকাঙ্ক্ষা, অতীতে যা-ই হোক বাংলাদেশ লিগের দ্বিতীয় পর্বে আর পাতানো খেলা হতে দেওয়া যাবে না।
এই আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিমূলে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা। এমন দল পাওয়া কঠিন, যারা পাতানো খেলেনি বলে দাবি করতে পারে। কিন্তু কথিত ‘প্রমাণের’ অভাবে বরাবরই বিষয়টা থেকে গেছে পর্দার আড়ালে।
এবার কি প্রকাশ্যে আসবে? কেউ পাতানো খেলা খেললে কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে? প্রশ্নগুলো নতুন করে উঠে আসছে তৃতীয় পেশাদার লিগের ফিরতি পর্ব শুরুর আগে। আগামীকাল এই পর্ব শুরু হচ্ছে এবং অনেকের শঙ্কা—ফিরতি পর্বে দেদার পয়েন্ট কেনাবেচা চলবে। কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে, কেউ অবনমন ঠেকাতে পাতানো খেলবে। যার যেমন দরকার!
বাফুফে কর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা ব্যাপারটা স্বীকার করে নেন, ‘হ্যাঁ, পাতানো হতে পারে এবারও।’ কিন্তু ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গ এলেই তাঁরা চুপসে যান। অতীতে বহুবার উদ্যোগ নিয়েও এটা প্রমাণ করা যায়নি বলে এড়িয়ে যান কর্তারা।
তবে কাল জানা গেল, বাংলাদেশ লিগের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচগুলো ভিডিও করা হবে (প্রথম পর্বে ভিডিও হয়নি)। এটা একেবারেই প্রাথমিক একটা উদ্যোগ, তবে তা খেলা পাতানোমুক্ত লিগের নিশ্চয়তা কি দিতে পারছে? বাংলাদেশ লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী বলছেন, ‘আমরা দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচ ভিডিও করব। তারপর প্রয়োজনে পুলিশি তদন্তে যাব।’
পুলিশি তদন্ত! সে সুদূরপরাহত এক ব্যাপার। গতকালই বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান লিগ কমিটির কর্মকর্তা আনোয়ারুল হকের (হেলাল) দেওয়া তথ্যটা হতে পারে এর অকাট্য প্রমাণ।
‘আমি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় প্রথম পেশাদার লিগে আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচসহ সাতটি ম্যাচ তদন্ত করতে ঢাকা মহানগরের তত্কালীন পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলাম। পরপরই ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করলাম, এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অগ্রগতি না থাকলে এ ধরনের বিষয়ে পুলিশ আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না’—বলছিলেন দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ফুটবলে পাতানো ম্যাচ দেখে আসা আনোয়ারুল হক।
পাতানো খেলা প্রমাণে পুলিশি তদন্তই এখন বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। সম্প্রতি মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, চীনে পুলিশি তদন্তে পাতানো খেলা প্রমাণিত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছে অভিযুক্তরা। কিন্তু বাংলাদেশে গুরুতর এবং যৌক্তিক অভিযোগ উঠলেও উল্টো ‘পাতানো হয়নি’ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়! পেশাদার লিগেই একবার পাতানো খেলার অভিযোগ উঠলে পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি বলেছিল, তারা পাতানো ম্যাচের প্রমাণ পায়নি!
এবার কী হবে কে জানে। তবে ক্লাবগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা যায় কি না, সে ব্যাপারে লিগ কমিটির এক কর্মকর্তা প্রস্তাব রাখবেন বলে জানিয়েছেন গতকাল। কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদীর ভাবনা অবশ্য ভিন্ন, ‘ক্লাবগুলোকে আগেই পাতানো খেলো না বলা মানে পাতানো খেলার বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়া। তাই চিঠি দেওয়ার দরকার নেই। তবে আমরা সতর্ক থাকব। যাতে কেউ পাতানো খেলা খেললে ধরা পড়ে।’
ম্যাচ ভিডিও করা, পুলিশি তদন্ত—এসব ব্যবস্থা পাতানো খেলা বন্ধ করতে পারবে না বলে নিশ্চিত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা, ‘যত দিন পর্যন্ত ক্লাব কর্মকর্তারা পাতানো খেলা বন্ধে আন্তরিক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন না, তত দিনে কিছুই বদলাবে না!’

No comments

Powered by Blogger.