দুর্নীতি দমনে পদ্ধতিগত সংস্কারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী

কেবল শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান দিয়েই দুর্নীতি খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, দুর্নীতি দমন বা প্রশমন করতে হলে পদ্ধতিগত সংস্কার আনতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বিশিষ্ট ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ রচিত এগিয়ে যাওয়ার অর্থনীতি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল শনিবার এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্ধতিগত সংস্কারের অস্ত্র আমাদের হাতেই রয়েছে। সেটা হলো তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে দুর্নীতি অনেকখানি প্রশমন করা যাবে। তবে পুরোপুরি উচ্ছেদ করা যাবে না, উচ্ছেদ হয়তো সম্ভব নয়।’
তবে অনুষ্ঠানের সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, ‘দুর্নীতির জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তন দরকার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু পদ্ধতি পরিবর্তন করেই দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। এ জন্য যাঁরা দুর্নীতি করবেন, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
মামুন রশীদের বইয়ে দুর্নীতি দমনে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মূলত এ বিষয়টি কেন্দ্র করে দুর্নীতিবিষয়ক আলোচনার সূত্রপাত ঘটে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বইটির প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের পরিচালক মাসুম রহমান এবং প্রকাশনা অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেড় বছর ধরে অর্থনীতি একটা বিশ্বমন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় একটি গুণগত পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশের মতো গরিব, বঞ্চিত দেশের জনগণকেই এ পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মন্দা আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছে যে রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, অর্থনীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া, সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া—এ ধরনের ধারণার ব্যাপারে পুনরায় ভাবনা-চিন্তার সময় এসেছে।’
অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি এমন যেন আমরা একটা অন্ধকারের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) তাদের বিভিন্ন সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে।’
বইটিতে অনেক উপাদান রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে একমত হওয়া যায়। তবে ভিন্নমত প্রকাশেরও সুযোগ রয়েছে এ কথা উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বইটিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদেশ থেকে ঋণগ্রহণের সুবিধা অবাধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন সোপানে পৌঁছায়নি, যেখানে নিয়ন্ত্রণহীন বৈদেশিক ঋণগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ জাতিসংঘের কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৯৬-৯৭ সালে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এ কারণে মন্দার কবলে পড়েছিল।’
মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘মুদ্রানীতি ও সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিনিয়োগ কম হওয়ায় মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক হতে বাধ্য। সে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের জন্য অত্যন্ত কঠিন।’
সুদের হার প্রসঙ্গে মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোতে আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য অনেক বেশি। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার অদক্ষতার কারণেই এমনটি ঘটছে।
আকবর আলি খান বলেন, উচ্চ সুদহার হলেই যে খারাপ, তা নয়। আইন করে সুদহার কমাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে ঘুষের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণপ্রবাহও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.