ব্যবসায় আস্থা বাড়লেও জ্বালানি সংকট বিনিয়োগের প্রধান বাধা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে, এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। তাই ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বিনিয়োগ আগের প্রান্তিকের তুলনায় বাড়বে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়লেও গ্যাস-বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান ছাড়া দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে না।
বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ এ মতকে সমর্থন করার পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, বিদ্যুত্ ও গ্যাস খাতে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, বিদ্যুত্ উত্পাদন ও গ্যাস উত্তোলনে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ড (বিআইসিএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিআইসিএফ ২০০৯-১০ সালের ব্যবসায়িক জরিপের উল্লেখযোগ্য দিক: ব্যবসায়িক অনুভূতিতে প্রতিফলন’ শীর্ষক সেমিনারে তাঁরা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও বিআইসিএফের প্রধান জেমস ক্রিটলি। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইসিএফের বিনিয়োগনীতি কর্মকর্তা (আইপিও) আমিনুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এস এ সামাদ বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা ও বিনিয়োগ পরিবেশ আকর্ষণীয় করতে হলে সরকারের অন্যান্য চার-পাঁচটি সংস্থাকেও সক্রিয় করতে হবে।’ তিনি নতুন বিদ্যুত্ ও গ্যাস উত্পাদন প্রকল্প গ্রহণে দরপত্র প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে এ প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিশ্বমন্দার প্রভাব ২০০৯ সালের প্রথম দিকে দেশের রপ্তানি তথা অর্থনীতির ওপর না পড়লেও শেষ ভাগে এসে পড়ে। তাই রপ্তানি ও বিনিয়োগ সংকুচিত হয়। কিন্তু ২০১০ সালের প্রথম দিকে দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাা বেড়ে যাওয়ায় প্রথম প্রান্তিকে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে, যা দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শ্রমঘন শিল্পের পরিমাণ বেশি। এ জন্য শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর প্রত্যক্ষভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়াতে হবে। দেশের বিদ্যুত্ ঘাটতি ও দুর্বল অবকাঠামো শিল্প পরিচালনার জন্য বড় বাধা। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বিদ্যুত্ ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়ানো সরকারের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
তবে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুল হক জরিপ ফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা কীভাবে বেড়েছে তা সমীক্ষায় উল্লেখ নেই। এত কমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের ওপর সমীক্ষা করে এ ধরনের পূর্বাভাস করা যায় না। তা ছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সমীক্ষায় বিনিয়োগ বোর্ড ও সরকারের কাছে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।’
সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করে আমিনুর রহমান বলেন, দেশের সেবা খাত এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো উত্পাদনশীল খাত ও বড় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটতে শুরু করায় গত বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশে ব্যবসায়িক মুনাফা ও বিনিয়োগ বেড়েছে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। ফলে ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা মত দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসি পরিচালিত বিআইসিএফ ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্কারের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী এক হাজার ৪৪০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জরিপ পরিচালনা করেছে। বিআইসিএফ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আফতাব-উল ইসলাম, বিআইএফটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ তসলিম, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাশেম খান, ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এম শাহজাহান খান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, নিউএজ গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ এস এম কাসেম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.