সংবিধান সংশোধন, না ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন? -শাসনব্যবস্থা by এমাজউদ্দীন আহমদ

১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কে হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চে একটি রায়ের পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে ব্যাপকভাবে। যাঁরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরতে চান, তাঁদের মূল বক্তব্য প্রধানত একটি এবং তা হলো, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে রচিত সংবিধানকে নির্মমভাবে কাটাছেঁড়া করে তার চরিত্রটাই পাল্টে দেওয়া। এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক মহল আবার ফিরে যেতে চায় ’৭২-এর সংবিধানে এবং ফিরিয়ে আনতে চায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয় ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সংসদীয় গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হয় ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেওয়া হয় ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার’। যারা ’৭২-এর সংবিধানের প্রতি এত দুর্বল তাদের গভীর দুর্বলতা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি। তাই পঞ্চম সংশোধনীর প্রতি তাদের এত উষ্মা, এত ক্রোধ, এত বিদ্বেষ। এই নিবন্ধে এ সম্পর্কে ছোট্ট এক পর্যালোচনা রয়েছে।
এক. আমার মতো যাঁরা ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন ও সংবিধানের কার্যকারিতা সম্পর্কে চোখ খুলে রেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলেন এই দেখে, যে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের লেগেছিল নয় বছর, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল, হোক সে সংবিধান ত্রুটিপূর্ণ, অবিন্যস্ত অনুকরণ। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এই সংবিধানের গায়ে এমন নির্মম ছুরি-কাঁচি চালানো অনেকেই পছন্দ করেননি। তবে এই না-পছন্দের ঝালটা শুধু পঞ্চম সংশোধনীর দিকে ছুড়ে দিয়ে তাঁরা এক ভয়ানক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। পঞ্চম সংশোধনীর আগেই যে ’৭২-এর সংবিধান বিধ্বস্ত হয়েছে, অর্থাত্ ’৭২-এর সংবিধানে বিধৃত সরকারের কাঠামো, সরকার পরিচালনার মূলনীতি, মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তাঁরা কিছু বলছেন না। দ্বিতীয় ও চতুর্থ সংশোধনীর দিকে তাকান, অনুধাবনে এতটুকু অসুবিধা হবে না, কেমন অবলীলাক্রমে মাত্র বছর দুয়েক আগে প্রণীত সংবিধানে সুনির্দিষ্ট সরকারের মূল কাঠামোয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে ’৭২-এর সংবিধানের আদলটা পুরোপুরি পাল্টে দেওয়া হলো। যে সংসদীয় গণতন্ত্রের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ তার জয়যাত্রা শুরু করেছিল, মাত্র আড়াই-তিন বছরের মাথায় সেই সংসদীয় ব্যবস্থা বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হলো। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে প্রবর্তিত হয় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার প্রবর্তিত হলেও চলত, কেননা দুই-ই গণতান্ত্রিক, কিন্তু দেশের সব দলকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) মতো একদলীয় জগদ্দল বা কর্তৃত্বব্যঞ্জক দৈত্যরূপী এক প্রাণীর (authoritarian leviathan) সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয় সংশোধনীর দিকে দৃষ্টি দিন। দেখবেন মুক্তিযুদ্ধের মূল সুর যে গণ-অধিকার, তা কীভাবে হারিয়ে গেল। সংবিধানে জরুরি বিধানের সংযোজন জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই গণ-অধিকার সংরক্ষণের দাবি ছিল এই সমাজের দাবি। দাবি ছিল সমাজব্যাপী আইনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীতে সেই দাবি হারিয়ে যায়। সুতরাং পঞ্চম সংশোধনী যদি সত্যি বাতিল হয়ে যায়, তাহলেই কি বাহাত্তরের সংবিধান ফিরে পাওয়া যাবে? আর ফিরে পেলেই কি সব অভিযোগের অবসান ঘটবে? কাটাছেঁড়ার কথা বললে তো দেখা যায়, পঞ্চম সংশোধনীর আগেই তা ঘটে গেছে। পঞ্চম সংশোধনীতে কিছু কাটাছেঁড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিছু কাটাছেঁড়ার মেরামতও হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি, গণতন্ত্র্রের অন্যান্য অনুষঙ্গ যেমন—সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব ও স্থানীয় শাসনের পুনঃপ্রবর্তন পঞ্চম সংশোধনীর অবদান।
দুই. দেশের বাম পন্থার রাজনীতিকদের প্রত্যাশা, ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হবে। সমাজতন্ত্রের নীতি ’৭২-এর সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য মূলনীতি। কোনো জনপদে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সেই জনপদে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সুসংহত সমাজতান্ত্রিক দল সংগঠিত হয়, উত্পাদনের উত্সগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসে, উত্পাদনের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উত্পাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন’ ঘটায় যেমন—অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিত্সাসহ প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদার সন্তুষ্টি বিধান সম্ভব হয়। এর যেমন রয়েছে রাষ্ট্রিক-সামাজিক দিক, তেমনি রয়েছে মানবিক দিকও।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বৃহত্ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের নীতি ঘোষণা করেন। ফলে দেশের বৃহত্ শিল্পগুলোর শতকরা ৮৬ ভাগ এবং ব্যাংক-বিমাগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা ৬০ ভাগ ছিল সাবেক ইপিআইডিসির নিয়ন্ত্রণে, শতকরা ২৫ ভাগ ছিল পরিত্যক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শতকরা ১৫ ভাগ ছিল দেশীয়। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মাত্রা স্থির করা হয় ২৫ লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগ হয় নিষিদ্ধ। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের সমাজতন্ত্রে কোনো দীক্ষা বা বিশ্বাস ছিল না, ছিল না কোনো আদর্শিক অঙ্গীকারও, তাই অচিরেই শিল্পক্ষেত্রে দেখা দেয় নৈরাজ্য। উত্পাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। চোরাচালান ও দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। এক কথায়, অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সরকার পাশ্চাত্য ও তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে সহায়তার জন্য হাত পাততে বাধ্য হয়। তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ১৯৭৪ সালের ১৬ জুলাই তখনকার শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সমাজতন্ত্রে পরিবর্তন এনে নতুন বিনিয়োগ নীতি ঘোষণা করেন। এর ফলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সমাজতন্ত্র পড়ে রিভিশনের মুখে। এক. বেসরকারি বিনিয়োগের মাত্রা ২৫ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয় তিন কোটি টাকা। দুই. বিদেশি বিনিয়োগের পথ আবার খুলে দেওয়া হয়। তিন. জাতীয়করণ প্রক্রিয়া ১৫ বছরের জন্য স্থগিত হয়। চার. ঘোষিত হয়, ১৫ বছর পর যদি জাতীয়করণের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন যথোপযুক্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে।
অন্য কথায়, ’৭২-এর সংবিধানে সমাজতন্ত্র যে কয়েক দিন টিকে ছিল, তা ছিল শুধু আকাঙ্ক্ষায়, বাস্তবতায় নয়। ভারী শিল্প, ব্যাংক-বিমার অবদান সামগ্রিক জাতীয় উত্পাদনে ছিল শতকরা ২০ ভাগের নিচে। অর্থনীতির মৌল ভিত্তি যে ভূমিব্যবস্থা সে ক্ষেত্রে এক ধরনের সমবায়ের কথা ভাবা হচ্ছিল বটে, কিন্তু তা দিয়ে যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না, তা সর্বজনস্বীকৃত। সর্বজনস্বীকৃত এটিও যে সমাজতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক দল। এখন যদি ’৭২-এর সমাজতন্ত্র ফিরে আসে, তাহলে ১৯৭২-৭৫ সময়কালে বাংলাদেশে যা ঘটেছিল, তা থেকে কি আমরা দূরে থাকব? তবে সমাজতন্ত্র আদর্শ হিসেবে টিকে থাকবে চিরদিন। প্লেটো থেকে যার সূচনা, মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস মাও-এ যার পূর্ণতা, তা মানবসমাজকে চিরদিন হাতছানি দিতে থাকবে। সেই হাতছানির জবাব কি আজকে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা?
ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে কোনো একজন পর্যালোচক কয়েক দিন আগে লিখেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা হলো মুক্তিযুদ্ধের ফসল। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ যদি হয় সম-সাম্প্রদায়িকতা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহনশীলতা, তাহলে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বসবাস করছে কয়েক হাজার বছর ধরে। মুসলমানের কুঁড়েঘর এবং হিন্দুর ছাপরা হাজার বছর ধরে সখ্য বজায় রেখে দিনাতিপাত করছে। পদ্মা-যমুনা-মেঘনাবিধৌত অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার আবর্জনা কোনো দিন সঞ্চিত হয়নি। আমার অনুভবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক চেতনা। অন্য কথায়, সংবিধানে উল্লিখিত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির গৌরব অর্জন করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালেও এর জন্ম হয়নি। ১৯৪৮-৫২-এর ভাষা আন্দোলনেও ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপক ব্যাপ্তি আমাদের জাতীয় জীবনে বিরাট অর্জনে সহায়ক হয়ে উঠেছে। আমাদের জাতীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডে সাম্প্রদায়িকতা সব সময় পরিত্যাজ্য রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন-বিক্ষোভে শতধারায় তা প্রকাশিত।
সাম্প্রদায়িকতা এক সামাজিক ব্যত্যয়। সংবিধানের দিকে তাকিয়ে কেউ সাম্প্রদায়িক হয় না, অথবা কেউ সাম্প্রদায়িক হতে চাইলে সংবিধান তাকে ঠেকাতেও পারে না। আমাদের সৌভাগ্য, এই মাটির কোনো সুযোগ্য সন্তানকে সাম্প্রদায়িকতার নোংরা আবর্জনা স্পর্শ করেনি। ’৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়। পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সন্নিবেশিত হয়। সংবিধান শুরু হয় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে। তার পরও কিন্তু বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়নি। অন্যদিকে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে ১৯৭৭ সালে। সামাজিক জীবনকে আলোকিত না করে শুধু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করলে যে কোনো ফল হয় না, তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে ভারতেই। বিচারপতি লিবারহান কমিশনের রিপোর্টটিতে দেখবেন, কীভাবে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং, সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এবং বেশ কিছু জাতীয় নেতা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং কীভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়েছিলেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নৃশংসতার কথা উল্লেখ না-ই বা করা হলো। ভারতের সবচেয়ে প্রগতিবাদী পশ্চিম বাংলার বাম সরকারের তিন দশকের শাসনামলে সেখানকার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিমরা কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে, সাচার কমিশনের রিপোর্ট তার প্রমাণ।
’৭২-এর সংবিধানের আরেকটি মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সংবিধান যখন গৃহীত হয় তখন গণপরিষদের সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা নিজেই এর প্রতিবাদ করেছেন। শুধু তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হননি, প্রতিটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাবি করেছিলেন সংবিধানে। বাংলাদেশ একক কোনো জাতির বাসস্থান নয়। বহু জাতির মোজায়েকে গড়া এই সমাজ। শুধু একই ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে কোনো জনসমষ্টির জাতীয়তা চিহ্নিত হতে পারে না। বিশ্বে এর কোনো নজিরও নেই। ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ অর্থাত্ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কোনো বিকল্প আছে কি? বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে সংকীর্ণতা, তার বোঝা আর কত দিন বহন করবেন?
তিন. যাঁরা ’৭২-এর সংবিধান ফিরিয়ে আনতে চান, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে ওই সময় এই সংবিধান রচনা এবং সংবিধানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কে কী বলেছিলেন গণপরিষদে এবং গণপরিষদের বাইরে, পত্রপত্রিকায়। বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন ড. আবুল ফজল হকের বাংলাদেশের রাজনীতি: সংঘাত ও পরিবর্তন বইটির ৮০—৯২ পৃষ্ঠা। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গণপরিষদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, গণপরিষদের সদস্যরা ইয়াহিয়া খানের আইনগত কাঠামোয় (১৯৭০) ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছয় দফাভিত্তিক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন আদায়ের ম্যান্ডেট লাভ করেন। তিনি বলেন, এ জন্য সব রাজনৈতিক দলের যৌথ সংগ্রামের মাধ্যমে যে সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বাংলাদেশের সংবিধান রচনার অধিকার তাঁদের নেই (দৈনিক বাংলা, ২১ অক্টোবর ১৯৭২)। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য ছিল অভিন্ন। তাদের সুপারিশ ছিল, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সংগঠিত জাতীয় কনভেনশনে সংবিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
সংবিধানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কেও মত প্রকাশ করেন বিভিন্ন জন। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজনের দাবি করেন আওয়ামী লীগের একজন গণপরিষদ সদস্য। ইসলাম-পছন্দ ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যুদ্ধের অব্যবহিত পরে নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশের সুযোগ ছিল না। তবে জানা যায়, বাম পন্থার রাজনীতিকদের সুরেই তা প্রতিধ্বনিত হয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধু প্রতিবাদ এবং সঙ্গে সঙ্গে উপজাতীয়দের স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি থেকে শান্তিবাহিনীকে সংগঠিত করে বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করেন সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি সংবিধানের হস্তলিখিত ও অলংকৃত বাংলা ও ইংরেজি কপিতে স্বাক্ষরও দেননি।
গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র সংবিধানের খসড়ায় যেভাবে সন্নিবেশিত হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবাদ উত্থাপিত হয় সর্বাধিক। গণপরিষদে বিরোধী দলের ন্যাপ সদস্যের পক্ষ থেকে সর্বাধিক প্রতিবাদ আসে। মানবেন্দ্র বলেন, সংবিধানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান করা হয়নি। গণতন্ত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার যেভাবে সংরক্ষিত হয়ে থাকে, এই সংবিধানে তারও ব্যবস্থা নেই। মৌলিক অধিকার, তাঁর কথায়, ‘অস্পষ্ট’ ও ‘অপর্যাপ্ত’; কেননা মৌলিক অধিকারের ওপর বিভিন্ন ধরনের বাধানিষেধ আরোপ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত অর্থনৈতিক অধিকারগুলো ‘সাধু ইচ্ছা’ ছাড়া অন্য কিছু নয়; কারণ সেগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবেযাগ্য নয়। মানবেন্দ্র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা (৫৭.২ অনুচ্ছেদ), ৭০ অনুচ্ছেদের অধীন সংসদ সদস্যপদ বাতিল, রাষ্ট্রপতির সরকারি কর্মচারীদের অপসারণ করার ক্ষমতা (১৩৫ অনুচ্ছেদ) সংবিধানকে অগণতান্ত্রিক করে তুলেছে (বাংলাদেশ গণপরিষদ, বিতর্ক, ২য় খণ্ড সংখ্যা ৮, ১৯৭২-২২১-৩৫)।
গণপরিষদের বাইরের সমালোচনা ছিল আরও তীব্র। শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল সংবিধানে পরিকল্পিত সমাজতন্ত্রকে ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তির সমাজতন্ত্র’ বলে চিহ্নিত করে। এই দলের নেতা বলেন, সরকার সমাজতন্ত্রের নামে কেবল পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্ত করেছে, কিন্তু সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য, যেমন ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ এবং শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কোনো ব্যবস্থা সংবিধানে রাখেনি। মূলনীতিগুলো কার্যকর করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সংবিধানে উঠতি ধনিক শ্রেণী ও জোতদারদের শাসন পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র (দৈনিক বাংলা, ১৯ অক্টোবর ১৯৭২)। তাদের মতে, এই সংবিধান সংশোধনেরও অযোগ্য।
বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মতে, এই সংবিধানে কিছু ‘ভালো ভালো কথা ও সাধু ইচ্ছা’ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সন্নিবেশিত হলেও নাগরিকদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিত্সা ও কর্মসংস্থানের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সংসদে কৃষক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বের কোনো ব্যবস্থা নেই। ‘বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি’ বাজেয়াপ্ত এবং ‘সামন্তবাদ’ বিলোপের কোনো ব্যবস্থা সংবিধানে নেই। তাঁরা আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনস্বার্থ, নৈতিকতার অজুহাতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে (দৈনিক বাংলা, ১৯, ২৩, ২৯ অক্টোবর ১৯৭২)। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা বলেন, সংবিধানটি একটি ‘বাজে সংবিধান’। মৌলিক অধিকারগুলোর ওপর বাধানিষেধ আরোপ করে গণতন্ত্রকে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রে’ পরিণত করা হয়েছে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ‘কাগজি বুলিতে’ পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ‘শো বয়’ এবং প্রধানমন্ত্রীকে সর্বেসর্বা করা হয়েছে (ইত্তেফাক, ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর ১৯৭২)।
শুধু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মুজাফফর) এবং তাদের সমর্থিত ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, সংবিধানটি সমাজতান্ত্রিক নয়, তবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করা যায় (দৈনিক বাংলা ও সংবাদ, ১৭ অক্টোবর ১৯৭২)। তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে ‘দেশপ্রেমিক’ রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ করেনি।
চার. তার পরও বলা যায়, ’৭২-এর সংবিধান এই জাতির এক মূল্যবান সম্পদ, হোক না তা অসম্পূর্ণ অথবা ত্রুটিপূর্ণ। তা ছিল নতুন রাষ্ট্রে চলত্শক্তি সরবরাহের উত্তম মাধ্যম। তত্কালীন সামাজিক মানসের প্রতিচ্ছবি। এক ঐতিহাসিক দলিল। এভাবেই ’৭২-এর সংবিধানকে গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করতে হবে একটি সেরা জাতীয় অর্জন হিসেবে। কিন্তু প্রায় চার দশক আগের সেই সেরা অর্জনকে জাতির প্রাত্যহিক ব্যবহারের উপযোগী ভাবা ঠিক কি? যাঁরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চান, তাঁদের মনন-চিন্তন কি সেই বাহাত্তরেই আটকে রয়েছে? নাকি তা করতেই হবে—এমন অনমনীয় জেদ? আর ’৭২-এ ফিরে যেতে চাইলে যাবেন কীভাবে? আইনমন্ত্রী অবশ্য বলে ফেলেছেন, পঞ্চম সংশোধনী প্রসঙ্গে যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন, তবে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাব। এ বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য? পঞ্চম সংশোধনী যদি বাতিল ঘোষিত হয়, তাহলেও তার আগের চারটি এবং পরের সংশোধনীগুলোর কী হবে? কোনো কথা বলা যত সহজ, তা বাস্তবায়ন তত সহজ নয়। এ সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা কি ফেলে দেওয়ার মতো কিছু? পঞ্চম সংশোধনীতে বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কতকগুলো উপাদান সংযোজিত হয়েছে, যা জাতির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলোকে প্রধানমন্ত্রী ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করেছেন। যে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ জিয়ারত করেন এবং দরগাহে মোনাজাত করে সাধারণ নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরু করেন, সেই দেশে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত উপাদানগুলোকে অপসারণ করা কি সম্ভব? ’৭২-এর সংবিধানে এগুলো ছিল অনুপস্থিত। পরিবর্তিত সময়ের দাবিতেই তা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, সময় তা বলে দেবে, তবে জনস্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদকে অর্থপূর্ণ করে দেশের শাসনব্যবস্থাকে কল্যাণমুখী করার লক্ষ্যে সংশোধন করার কোনো বিকল্প দেখি না।
ক. বাংলাদেশ সংবিধানের সর্বোত্তম বাক্যটি হলো ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’—অনুচ্ছেদ ৭ (১)। অনেকের মতে, সবচেয়ে অর্থহীন হলো এই বাক্যটি। কেননা নির্দিষ্ট সময়ে কিছুসংখ্যক ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার ছাড়া এই মালিকানার কোনো অর্থ নেই। এটাকে অর্থপূর্ণ করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে সাধারণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সঙ্গে এই মালিকানার যোগসূত্র থাকতে হবে।
খ. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার অলঙ্ঘনীয়। জনস্বার্থের অজুহাতে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের বা নৈতিকতার অজুহাতে মৌলিক অধিকারের সীমারেখা নির্ধারিত হওয়া ঠিক নয়। এমনকি আইনের দোহাই দিয়েও তা সীমিত করা সঠিক নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক অধিকার এভাবে সীমিত করার প্রয়াস দেখা যায়। সংবিধানের এই অংশগুলো সংশোধনযোগ্য।
গ. নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল কথা হলো সামষ্টিক সরকার, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য কর্তৃত্ব এবং সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সীমিত সরকার। এই আলোকে সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের সংশোধন জরুরি। সংসদীয় ব্যবস্থার ইতিহাসে সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ ব্যতিক্রর্মী এবং নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী। কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কোথাও কোনো শাসকের হস্তে দেশের নির্বাহী কর্তৃত্ব ন্যস্ত হয়েছে কি?
ঘ. সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সাংসদদের দ্বারা পরোক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রসম্মত নয়। মহিলা সদস্যদের জন্য তা মর্যাদাকরও নয়। এই অনুচ্ছেদ সংশোধন করে মহিলা সদস্যদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থাই উত্তম।
ঙ. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বর্তমানে যেভাবে কার্যকর হচ্ছে, তা দলীয় সদস্যদের দলীয় নেতৃত্বের প্রতি শুধু আনুগত্যই সৃষ্টি করছে, সৃষ্টি করছে না এতটুকু সৃজনশীলতা, মৌলিকত্ব বা স্বাতন্ত্র্যবোধ। এ অবস্থা অনাকাঙ্ক্ষিত। দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে সদস্যদের স্বাতন্ত্র্যবোধের সমন্বয় সাধন করে এই অনুচ্ছেদের সংশোধন জরুরি।
চ. ৭২ অনুচ্ছেদ সংশোধনও অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় সংসদের কার্যকাল পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর হওয়া প্রয়োজন এ জন্য যে ক্ষমতার প্রতি আমাদের রাজনীতিকদের দুর্বলতা এবং এ কারণে হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি; ফলে দলীয়করণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির ব্যাপকতা থেকে জাতি অনেকটা মুক্ত হতে পারবে।
ছ. সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে একজন স্পিকার এবং একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পরে বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। যেন জাতীয় সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও একটা সুনির্দিষ্ট দায় সৃষ্টি হতে পারে।
জ. সংবিধানের ১৩৫ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্তের বিবরণ দেওয়া হয়েছে কিন্তু যাঁদের তিনি বরখাস্ত করতে পারবেন, তাঁদের যেন তাঁরই কর্তৃত্বে নিয়োগদানের ব্যবস্থা হয়, তা নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
[লেখাটির ওপর আমরা মতামত ও প্রতিক্রিয়া ছাপতে আগ্রহী। সর্বোচ্চ ৮০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠান। বিভাগীয় সম্পাদক। ]
এমাজউদ্দীন আহমদ: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.