সেঞ্চুরিয়ন দেখল রোমাঞ্চকর ড্র

মাঠটার নাম যখন সেঞ্চুরিয়ন, আর মুখোমুখি যখন দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড, টেস্টের ফলাফল তো ড্র-ই হবে! রেকর্ড বলছে সেটাই। সেঞ্চুরিয়নে এই দুদলের আগের তিন ম্যাচের দুটোই ড্র। অন্যটির ফলও একই হতো। বৃষ্টিতে তিন দিন ভেসে যাওয়ার পরও ম্যাচটা ফল দেখেছিল। কারণ, ২০০০ সালের ওই ম্যাচে একটা ফলাফল এনে দেওয়ার জন্য ‘বাজিকর’দের কথা দিয়েছিলেন হানসি ক্রনিয়ে!
এই ম্যাচটিও ড্র হলো। তবে কাল শেষ বিকেলে তা ছড়িয়ে দিল অনেক উত্তেজনা। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টা থেকে গেল একটা মাত্র উইকেটের দূরত্বে। পল কলিংউড শেষ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম অনিয়নসকে (১*) নিয়ে ১৯ বল অবিচ্ছিন্ন থেকে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বাঁচিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। মাখায়া এনটিনির করা ম্যাচের শেষ বলটি ঠেকিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত হাওয়ায় ভাসিয়ে যেন ‘যুদ্ধ জয়ে’র ঘোষণাই দিলেন অনিয়নস। হ্যাঁ, ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচ ড্র করাটাও ছিল ‘যুদ্ধ জয়ে’র উপলব্ধি।
অথচ কাল চা-বিরতির পরও মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে। ৩ উইকেটে ১৭২ রান, উইকেটে জমে গেছেন কেভিন পিটারসেন ও জোনাথন ট্রট। কীভাবে এই জুটি ভাঙবেন, সেই চিন্তায় রীতিমতো দিশেহারা দেখাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে। এমন সময়ই দৃশ্যপটে এলেন অভিষিক্ত পেসার ফ্রিডেল ডি ওয়েট। না বোলার ওয়েট নন, ফিল্ডার ওয়েট।
পিটারসেনের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে ওয়েট তাঁকে করেছেন রানআউট। সঙ্গীর দিকে না তাকিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটা রান নিতে দৌড় দিয়েছিলেন। ফল: ১৯ রানের জন্য জন্মভূমিতে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটাই শুধু হাতছাড়া করেননি, ভেঙে যায় ট্রটের সঙ্গে তাঁর ১৪৫ রানের জুটিটাও। পিটারসেন যখন আউট হন, তখনো দিনের খেলার ৩৪ ওভার বাকি। তবে ম্যাচের মোড় ঘোরাতে এর পর জ্বলে ওঠেন বোলার ওয়েট। ৬ ওভারের মধ্যে ট্রট (৬৯), ইয়ান বেল (২) ও ম্যাট প্রিয়রকে (০) আউট করেন ডান হাতি পেসার। পরে স্টুয়ার্ট ব্রডকে (০) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান বাঁহাতি স্পিনার পল হ্যারিস, গ্রায়েম সোয়ানকে (২) এলবিডব্লু করেন মরনে মরকেল। ৩ উইকেটে ১৭২ থেকে ইংল্যান্ড মুহূর্তেই পরিণত হয় ৯ উইকেটে ২১৮ রানে। এরপর ম্যাচের বাকি ছিল ১৯ বল। কিন্তু অনিয়নসকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়-বঞ্চিত করেন কলিংউড (২৬)।
শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য সুবিধাজনক জায়গাতেই ছিল। ৯৬ ওভারে ৩৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড আগের দিনই মাত্র ৫ রানের মাথায় হারায় অধিনায়ক স্ট্রাউসকে। কাল ১২ ওভারের মধ্যেই জেমস অ্যান্ডারসন আর অ্যালিস্টার কুকের বিদায়ে ইংল্যান্ড পরিণত হয় ২৭/৩, চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। এরপরই ‘দুই দক্ষিণ আফ্রিকান’ ট্রট ও পিটারসেনের লড়াই।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসার আগে এই দুজনকে নিয়ে অনেক শোরগোল হয়েছে। কারণ, পিটারসেন-ট্রট দুজনই দক্ষিণ আফ্রিকানদের চোখে ‘বিশ্বাসঘাতক’। দুজনই বেড়ে উঠেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু শেষে জাতীয় দল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। সেই দুজনের ব্যাটেই প্রতিরোধ।

No comments

Powered by Blogger.