ব্রিটিশ এমপিদের কাছে অর্থ ফেরত চেয়ে সরকারের চিঠি

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছে না সে দেশের সরকার। সরকারি ভাতার অতিরিক্ত খরচের অভিযোগে অভিযুক্ত ৩২৫ জন সদস্যকে অর্থ ফিরিয়ে দিতে অথবা তাঁদের অতিরিক্ত ব্যয়ের অনুকূলে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
হাউস অব কমন্সের সদস্যদের দুর্নীতি তদন্তে গঠন করা কমিটির প্রধান স্যার টমাস লেগ তদন্তের কাজ শেষ করে তাঁদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছেন। গত শনিবার তদন্তের ফল উল্লেখ করার পাশাপাশি শতাধিক চিঠি বিলি করেছেন তিনি।
গ্রীষ্মকালীন অধিবেশন মুলতবির পর শিগগিরই হাউস অব কমন্সের সভা বসছে। ওই সময় সরকারি ভাতার অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি উল্লেখ করে সাংসদদের ই-মেইলও করা হবে।
স্যার টমাস লেগ সাংসদদের তিন ধরনের চিঠি দেবেন। তাঁদের একটি অংশকে অতিরিক্ত খরচের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। আরেকটি অংশের কাছে তাদের খরচের দাবির পক্ষে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আর তৃতীয় পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে, তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।
হোয়াইট হলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য সানডে টেলিগ্রাফকে বলেছেন, হাউস অব কমন্সের ৬৪৬ জন সদস্যের বেশির ভাগকেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া অথবা তাঁদের খরচের অনুকূলে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সাবেক শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা স্যার টমাস ও তাঁর দলের সদস্যরা তদন্তে দেখেছেন, আসবাবপত্রের জন্য সাংসদেরা অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেছেন।
এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের সাংসদদের ডেকে দ্রুত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। দলের কোষাধ্যক্ষের মুখপাত্র লর্ড ওয়াকশট বলেছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি ভাতা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের দ্রুত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাউস অব কমন্সের ১৭৫ জন সাংসদ এরই মধ্যে অতিরিক্ত খরচের অর্থ ফেরত দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী রোসি উইনটারটন আট হাজার ইউরো ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর টোরি দলের কয়েকজন সদস্যও অর্থ ফেরত দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্যার অ্যালান হ্যাসেলহার্স্টও রয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যাঁরা অর্থ ফেরত দিয়েছেন, তাঁদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
স্যার টমাসের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তের ব্যাপারে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা তিন সপ্তাহের মধ্যে সংসদীয় কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন।
২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে সাংসদদের বিরুদ্ধে সরকারি ভাতার ব্যয়সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের এই খবর প্রথম টেলিগ্রাফ-এ প্রকাশিত হয়। এরপর সরকার এই দুর্নীতি তদন্তের ভার তুলে দেয় স্যার টমাসের হাতে। টমাস বলেছেন, ব্যয়ের ব্যাপারে সাংসদেরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ঠিক যুক্তিযুক্ত নয়।
সাংসদদের দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আরও একটি দল কাজ করছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্যার ক্রিস্টোফার কেলি।
স্যার টমাস চিঠি বিলি শুরু করার পর গত শনিবার রাতেই কনজারভেটিভ পার্টির অভিযুক্ত সদস্যদের দুর্নীতির প্রায় ৫৫ হাজার ইউরো ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। এর আগে লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের সদস্যরা ধারণা করেছিলেন, দুর্নীতির বিষয়টি তাঁরা হয়তো এড়াতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.