শুল্ক বিভাগ সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত পিএসআই রাখার পরামর্শ- রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ

শুল্ক বিভাগ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনসহ (এফবিসিসিআই) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরও পিএসআই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর শুল্ক খাতে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। তাই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়া এ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হলে রাজস্ব সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে কেউ কেউ এও বলেছেন, দীর্ঘদিন পিএসআই ব্যবস্থা চালু থাকলে কাস্টমস ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, পিএসআই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে পিএসআই ব্যবস্থা: পরিপ্রেক্ষিত ও ভবিষ্যত্ কর্মকৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে গতকাল রোববার এসব মন্তব্য উঠে আসে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘শুল্ক মূল্যায়নে সব সময় কিছুটা শঠতার আশ্রয় নেওয়া হয়। এ শঠতা কমানোর জন্যই প্রথমে পরীক্ষামূলক ও পরে বাধ্যতামূলকভাবে পিএসআই ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু গত ১০ বছরে পিএসআই ব্যবস্থা যেভাবে চলছে, তা ভালো নয়।’
এ জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথমত পিএসআই পদ্ধতি কত দিন চলবে, তার কোনো মেয়াদ ঠিক করা হয়নি। অস্থায়ী ভিত্তিতে চালু করা হলেও তা অর্নিদিষ্টকাল ধরে চলছে।
দ্বিতীয়ত, চালুর পর থেকে পিএসআই কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে কোনো নিরীক্ষা হয়নি। অবশ্য এর দায়িত্ব এনবিআরের ওপরই বর্তায়।
তৃতীয়ত, পিএসআই কোম্পানির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আর সবশেষ কারণ হলো, দীর্ঘদিন ধরে পিএসআই কোম্পানি কাজ করার পরও শুল্ক বিভাগ দক্ষতা বাড়াতে পারেনি। তবে যেটুকু বেড়েছে তা দিয়ে পিএসআইয়ের প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব, পিএসআইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ব্যাপারে খুব বেশি দেরি করা যাবে না। কারণ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পিএসআই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় হয় চুক্তি বাতিল করতে হবে, নতুবা নতুন চুক্তি করতে হবে। তবে যেটাই হোক, তা করতে হবে স্থায়ী ভিত্তিতে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় এনবিআরের সদস্য রফিকুল ইসলাম, ফরিদউদ্দিন, হোসেইন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে ব্যবসায়ীদের পক্ষে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক। আর এনবিআরের পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল লতিফ সিকদার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পিএসআই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে পিএসআইয়ের কাজগুলো যাতে এনবিআর করতে পারে, সে জন্য দক্ষতা বাড়ানোর কাজ চলছে। এ জন্য তথ্যভাণ্ডার উন্নত করা হচ্ছে।’
নাসিরউদ্দিন আহমেদ আরও জানান, এ সেমিনারের খোলামেলা আলোচনা থেকে যেসব প্রস্তাব উঠে আসবে, সেগুলো সরকারের কাছে দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
পিএসআই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সময়সীমা বিষয়ে নাসিরউদ্দিন বলেন, ১ জানুয়ারি বা জুলাই থেকে পিএসআই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এবার একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সীমাবদ্ধতা দূর করার কর্মসূচি তৈরি করবে এনবিআর। কারণ ১০ বছরে এনবিআর পিএসআইয়ের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
আবদুল হক বলেন, পিএসআই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো পণ্যের অপঘোষণা রোধের মাধ্যমে রাজস্বের সুরক্ষা দেওয়া। এ পদ্ধতি চালুর ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। কিন্তু পিএসআই পদ্ধতি অব্যাহত না থাকলে এফবিসিসিআই এবং এনবিআরের মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কমিশনারেটের যৌথ উদ্যোগে পণ্যভিত্তিক মূল্য ডেটাবেইস তৈরি করা, শুল্ক আইনের অধীনে গঠিত কমিটি পুনর্গঠন করাসহ এনবিআরের মাঠপর্যায়ে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, পিএসআই ব্যবস্থা চালুর ফলে আমদানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং বা মূল্য কম দেখানোর প্রবণতা প্রতিরোধ করা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.