হঠাত্ই আলোর বৃত্তে সাজ্জাদ

তীরন্দাজিতে তাঁর সাধনা চলছিল নীরবে-নিভৃতে। তৈরি হচ্ছিলেন নিজেকে বড় মঞ্চে তুলে ধরতে। আরচারি ফেডারেশনও তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। তাঁর নিজের চেষ্টা, ফেডারেশনের সমর্থন—দুটো মিলে আলোয় উদ্ভাসিত হতে বেশি সময় লাগল না তীরন্দাজ সাজ্জাদ হোসেনের। তিনি এখন আরচারির ৭০ মিটার অলিম্পিক রাউন্ড ইভেন্টে এশীয় সেরা।
সাজ্জাদকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে ঈদের এক দিন আগে শেষ হওয়া কলকাতা গ্রাঁ প্রিঁতে। প্রতিবছর এমন পাঁচটি টুর্নামেন্ট হয়, সাজ্জাদ সোনা জিতলেন বছরের চতুর্থটিতে। পঞ্চমটি হবে আগামী ২১-২৫ অক্টোবর বিকেএসপিতে। তত দিন পর্যন্ত নিজের ইভেন্টে এশিয়ায় এক নম্বর তীরন্দাজের নাম সাজ্জাদ, বাংলাদেশের আরচারিতে এটা সর্বোচ্চ সাফল্য তো বটেই, প্রথম আন্তর্জাতিক সোনাও।
বাংলাদেশের আরচারি অঙ্গনে এখন যেন উত্সব চলছে। যাদের সৌজন্যে এ উত্সব, সেই বাংলাদেশ আরচারি দল ঈদের দিন সড়কপথে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরেছে। সীমান্ত পার হতেই স্থানীয় শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকেই সংবর্ধনা পেয়েছে তারা। বাংলাদেশ দল ফরিদপুর পৌঁছতে স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা ফুল আর মিষ্টিমুখ করিয়ে জানায় অভ্যর্থনা। সন্ধ্যায় ঢাকায় আসার পর ফুলেল শুভেচ্ছা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানও করেছে আরচারি ফেডারেশন। হয়েছে নৈশভোজ। সবকিছুরই উপলক্ষ—সাজ্জাদের অপ্রত্যাশিত সাফল্য।
বিকেল থেকেই এনএসসি টাওয়ারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন ফেডারেশন কর্মকর্তারা। সাজ্জাদের বাবাও। ছেলে বাস থেকে নামতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে সে কী উচ্ছ্বাস বাবার। ফেডারেশন কর্তারা তো পারলে সাজ্জাদকে মাথায় তুলে নাচেন।
চাঁদপুরের শাহরাস্তির ছেলে সাজ্জাদ কি ভুলতে পারবেন? চাঁদপুর থেকে কাল রাতে ফোনে বললেন, ‘এর আগে এলাকায় পরিচিতি ছিল। এখন সেটা আরও বাড়ল। অনেকেই অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন বাড়িতে এসে। এটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ঢাকায় আবুজর গিফারী কলেজে স্নাতক পড়ুয়া ২২ বছরের এই তরুণের জীবনটা হঠাত্ করেই বদলে দিল একটা সোনার পদক। সাজ্জাদ নিজেই এটি বুঝতে পারছেন, ‘সবকিছু একটু অন্য রকম লাগছে। যেখানেই যাই, সবাই সোনা জয়ের বিস্তারিত জানতে চাইছে। সবাই খুব খুশি। তবে এটাও বলছে, সামনে আরও ভালো করতে হবে।’
সাজ্জাদ নিজে কী চাইছেন? কেমন লাগছে তাঁর? বললেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সামনের সব টুর্নামেন্টে ভালো করতে চাই। প্রয়োজন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। খেলার ভালো সরঞ্জাম দরকার। নিজের ভবিষ্যত্ ও পরিবারের কথা যাতে ভাবতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই নিশ্চিতে খেলে যেতে পারব।’
আরচারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব উদ্দীন আহমেদ শোনালেন আশার বাণী, ‘সাজ্জাদকে হয়তো আমরা অর্থ পুরস্কার দেব। কিন্তু এটা দিয়েই সব শেষ নয়। তাঁর এখন দরকার উন্নত প্রশিক্ষণ। সেই ব্যবস্থা আমরা করব। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। পরিবারকে চিন্তা যাতে করতে না হয় সেটাও আমরা দেখব। এখন থেকে তাকে ১৬ ঘণ্টা অনুশীলন করতে হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
তার পরও প্রশ্ন আসছেই, সুযোগ-সুবিধার অভাবে সাজ্জাদ হারিয়ে যাবেন না তো? এমনিতেই তো এটি অপ্রধান খেলা। এখানে আধা পেশাদার হয়েও ক্রিকেটার বা ফুটবলারদের যে আর্থিক নিরাপত্তা আছে, সেটি তো এতে নেই!

No comments

Powered by Blogger.