বিশ্ব অর্থনীতির জড়তা কাটাতে এশিয়া নেতৃত্ব দেবে

বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথভাব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো নেতৃত্ব দেবে। কারণ, যতটা ভাবা হয়েছিল, এই দেশগুলো বিশ্বমন্দায় ততটা আক্রান্ত হয়নি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক গত মঙ্গলবার সংস্থাটির বার্ষিক প্রকাশনা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-এর যে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এসব কথা বলা হয়েছে।
হংকংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ জং-ওয়াহ লি প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে এশিয়ার মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগে মার্চ মাসে মূল প্রতিবেদনে এশিয়ার জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
একইভাবে ২০১০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার আগের ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য যেভাবে ব্যয় বাড়িয়েছে, তা এশিয়াকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব এশিয়া সামগ্রিকভাবে এই বছর ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। মার্চ মাসে বলা হয়েছিল, এই হার হবে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
পূর্ব এশিয়ার অগ্রগতির মূলে থাকছে চীনের অর্থনীতিতে গতিময়তা ফিরে আসা।
দেশটির সরকার ব্যাপকভাবে রাজস্ব প্রণোদনা প্রদান ও মুদ্রানীতি শিথিল করায় দেশটি এ বছর ৮ দশমিক ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে মনে করছে এডিবি, যা আগামী বছর ৮ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
এডিবি দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির হারও বাড়িয়ে প্রক্ষেপণ করেছে। মার্চ মাসে যেখানে চলতি বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, সেখানে এখন এই হার ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের প্রবৃদ্ধির হার আগের তুলনায় বাড়বে—এই প্রক্ষেপণের ভিত্তিতে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা বলা হচ্ছে।
তবে এসব ইতিবাচক পূর্বাভাস সত্ত্বেও যথেষ্ট সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছে এডিবি। বরং তড়িঘড়ি সরকারের দেওয়া প্রণোদনা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে—এ রকমটাই মনে করে এডিবি।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ: প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিশ্বমন্দায় রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, বিনিয়োগও নিরুত্সাহিত হয়েছে। তারপরও তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাগত আছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে এবং চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, গত অর্থবছরে (২০০৮-০৯) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের তুলনায় কম। কিন্তু মার্চ মাসে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল যে এই হার হবে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।
তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২০ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে। আর মূল্যস্ফীতির হার প্রক্ষেপণ করেছে সাড়ে ৬ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.