এ কোন সেমেনিয়া

কোঁকড়ানো কালো চুল। হালকা লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটে উজ্জ্বল হাসির দীপ্তি ছড়ানো। পরনে মিশমিশে কালো পোশাক। গলায় বড় চেইন। এক হাতে এক গাছি সোনার চুড়ি। কে বলে, কাস্টার সেমেনিয়া পুরুষদের মতো দেখতে? নিন্দুকেরা পারলে একবার দেখে নিক দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাধিক প্রচারিত ম্যাগাজিন ইউ-এর এবারকার প্রচ্ছদ। যেখানে এভাবেই সেজেগুজে হাজির দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারী দৌড়বিদ। গত বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক—কাস্টার কি আসলেই নারী?
মেয়েদের ৮০০ মিটার দৌড়ে বাকি সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে অনেক পেছনে ফেলে সোনা জেতার পর থেকেই শুরু বিতর্কের। পরশু আরও একটি জয় হয়েছে এই ১৮ বছর বয়সী তরুণীর। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস সংস্থা (আইএএএফ) জানিয়ে দিয়েছে, লিঙ্গ পরীক্ষার ফল যা-ই হোক না কেন, সেমেনিয়ার পদক তারা কেড়ে নেবে না। অথচ এই বিতর্কের ঝড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাথলেটিকস কোচ উইলফ্রেড ড্যানিয়েলস পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
ইউ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তো বটেই, তাঁর নারীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিন্দুকদের পাল্টা জবাব সেমেনিয়া দিয়েছেন ভেতরের ‘স্টোরি’তেও। সেখানে তিনি বলেছেন, তাঁর জেন্ডার পরীক্ষা স্রেফ একটা কৌতুক, ‘আমি এটাকে কৌতুক হিসেবেই দেখি। এটা আমাকে মোটেও বিব্রত করেনি। আমাকে ঈশ্বরই এভাবে বানিয়েছেন। এবং আমি সেটা মেনেও নিয়েছি। আমি যা, আমি তা-ই এবং আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত।’
তবে সেমেনিয়াকে শেষ পর্যন্ত লিঙ্গ পরীক্ষা দিতেই হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে তিনি মোটেও ভাবিত নন, ‘আমি এই সব পরীক্ষা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। এমনকি আমি এসব নিয়ে মোটেও ভাবি না।’
কিন্তু তাঁকে ঘিরে যে বিতর্কের ঝড় উঠে গেল তাতে তাঁর হূদয়ে কি একটুও আঁচড় পড়েনি? দৃঢ়প্রত্যয়ের সুরে বললেন, ‘আমি যখন বার্লিনে ছিলাম, তখনই আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের বলেছিলাম, আমাকে নিয়ে লোকে কী সব বলছে। আমি তাদের এসব কথায় কান না দিতে বলেছিলাম। তারা তো আমাকে চেনে। তারা জানে, আমি আসলে কী।’
তবে সবচেয়ে খাঁটি কথাটি বলেছে পরামর্শক দল ‘জেন্ডার লিঙ্কসে’র কলিন মরনা। তিনি বলছেন, ‘কাস্টারকে কাস্টার হয়েই থাকতে দিন।’

No comments

Powered by Blogger.