মার্কিন উদাসীনতার সুযোগে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে পাকিস্তান

পাকিস্তানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জনক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান বলেছেন, আশির দশকে আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে উদাসীন ছিল। এই সুযোগে পাকিস্তান ১৯৮৩ সালেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সমর্থ হয়। পাকিস্তানের একটি উর্দু টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে কাদির খান এ কথা বলেন।
কাদির খান পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির প্রাথমিক দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমার মনে হয়, আফগান যুদ্ধ পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার ব্যাপারে যাবতীয় কৃতিত্ব আমার দলকে দিতেই হবে। কারণ ওটা ছিল খুবই কঠিন একটা কাজ। প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। তবে এটা সত্যি যে ওই সময় আফগান যুদ্ধ না হলে আমাদের পক্ষে এত দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব হতো না।’
উর্দু চ্যানেলে গত ৩১ আগস্ট কাদির খানের সাক্ষাত্কারটি প্রচারিত হয়। সেই সাক্ষাত্কারটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে। অনুবাদটি সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে এর একটি কপি যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের সংস্থার (এফএএস) হাতে পৌঁছেছে।
পাকিস্তান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণের মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই পারমাণবিক পরীক্ষার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ১৯৭৮ সালের ৬ এপ্রিল পাকিস্তান প্রথম এই কর্মসূচি হাতে নেয়। এর মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯৮৩ সালের গোড়ার দিকে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে প্রায় ৯০ ভাগ অগ্রসর হয়ে যায় দেশটি। বিজ্ঞানী কাদির খান ১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হককে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি জেনারেল জিয়ার কাছে পারমাণবিক পরীক্ষার ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করেন। কারণ সে সময় মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব ছিল। কিন্তু জিয়াউল হক সে সময় পারমাণবিক পরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নেন।
পারমাণবিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের সে সময়কার অবস্থানের ব্যাপারে কাদির খান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া সে সময় পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বিশ্বজনমত এবং প্রতিক্রিয়ার কথা অনুধাবন করতে পেরে পিছিয়ে যান।’ কাদির খান আরও বলেন, ‘সে সময় পাকিস্তান আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছিল। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রচুর সাহায্য পাচ্ছিল। তাই প্রেসিডেন্ট জিয়া সে সময় পারমাণবিক পরীক্ষা না করে এই কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।’
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির খরচ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যাপারে কাদির খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ইউরোপে বসবাস করার কারণে পারমাণবিক গবেষণার যন্ত্রপাতি কোথায় কীভাবে ব্যবহার করা হয়, কীভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে আমি ভালোই জানতাম। সে সময় পাকিস্তানকে তারা ওই সব যন্ত্রপাতি দিতে চাইত না। আমি অন্যান্য দেশের মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্য ওই উপকরণগুলো সংগ্রহ করি।’ পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির উপকরণের জোগান আর ইরান ও লিবিয়ার পরমাণু কর্মসূচির উপকরণের জোগান একই মাধ্যমে হয়েছে বলে কাদির খান স্বীকার করেন।

No comments

Powered by Blogger.