পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, পুলিশের তত্পরতা হতে হবে আপসহীন -অপরাধ ও জননিরাপত্তা

ঢাকা কি চট্টগ্রাম, জনসমাগম কি নির্জন সড়ক—সবখানেই তারা আছে। তারা ছিনতাইকারী, তারা অজ্ঞান পার্টি, তারা সন্ত্রাসী। ঈদ যত কাছে আসছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ততই খারাপ হচ্ছে। তবে জননিরাপত্তার উন্নতি আর অবনতি যেন বাঁদরের তৈলাক্ত লাঠি বেয়ে ওঠারই গল্প। কোনো মাসে যদি ছিনতাই-রাহাজানি-চাঁদাবাজি কিছু কমে, পরের মাসে দেখা যায় সেটি আবারও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ‘ঈদ উপহার’ হিসেবে ফিরে এসেছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য আর চাঁদাবাজদের উত্পাত। ঈদ অনেকের জন্য তাই আনন্দের বদলে বিপদের কাঁটা হয়ে বিঁধছে।
সাধারণভাবেই অপরাধের মাত্রা বাড়লে খ্যাতনামা নাগরিকেরাও এর শিকার হতে পারেন এবং হচ্ছেন। বিশিষ্ট চিত্রসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদও অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীদের শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খ্যাতনামা চিকিত্সক ও লেখক সজল আশফাকও জনসগামস্থানেই আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সোমবারের প্রথম আলোর সংবাদ জানাচ্ছে, গত ১৮ দিনে ৩৭ জন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে ১০০ জন, নিহত হয়েছেন এক নাইজেরীয় নাগরিক। বুধবারের প্রথম আলো দেখাচ্ছে, চট্টগ্রামের পরিস্থিতিও তথৈবচ! শুক্রবারের খবরেও একই অশনিসংকেত।
ঈদ ও রোজায় আর্থিক লেনদেন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ বাড়ারও সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তা যেন সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাঝুঁকি আর বাড়াতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ১৫ কোটি মানুষের দেশের তুলনায় অল্প মানুষই হয়তো অপরাধের শিকার হয়। কিন্তু যে কেউই যখন-তখন দুষ্কৃতকারীদের নিশানায় পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনা দৃশ্যমান। এ রকম নিরাপত্তাহীনতা ব্যবসা-বাণিজ্য ও উত্পাদনে বাধা সৃষ্টি করে। এসব ঘটনা মানুষের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। নিরাপত্তার আস্থা শান্তি ও সমৃদ্ধির আবশ্যকীয় শর্ত এবং তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় না থাকলে সব দায় পুলিশকে দেওয়া যেত। কিন্তু আমরা জানি, অনেক সত্ পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা রাজনৈতিক বাধার মুখে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। আবার সরষের মধ্যেই ভূত হয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এমন অসাধু কাজ করেন, যা কেবল তাঁদের ভাবমূর্তির জন্যই ক্ষতিকর নয়, অপরাধের লাগামছাড়া পরিবেশ তৈরি করে। অপরাধের বিস্তার ঘটে তখনই।
পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি সরকারের করণীয় তাই অনেক। কেননা, অপরাধী চক্রগুলো যেমন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত, তেমনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় আদায়েও তারা দক্ষ। সুতরাং, ছিনতাই ও সন্ত্রাস বৃদ্ধির দায় সরকার এড়াতে পারে না। এই আনুকূল্যের শিকড় উত্পাটন করা সরকারের দায়িত্ব, আর পুলিশের দায়িত্ব তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কোনো সুযোগ না রাখা।

No comments

Powered by Blogger.