সংসদ অধিবেশন -এবারও কি বিরোধী দলশূন্য থাকবে

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও জোরদারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বটে, কিন্তু সংসদ যদি বিরোধী দলশূন্য পড়ে থাকে তাহলে জাতিসংঘ কী-ই বা করতে পারে! আজ নবম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের শুরুতে এ প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সমস্যার রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক তাত্পর্য কতটা উপলব্ধি করেন, বা আদৌ করেন কি না, বোঝা কঠিন। যদি তিনি এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেন তাহলে তো এত দিন ধরে বিরোধী দলের মুখ ফিরিয়ে রাখার কথা নয়। সরকারি দল বলতে পারে, তাদের কী করার আছে, কারণ বিষয়টি তো স্পিকার যথেষ্ট নমনীয় মনোভাব নিয়ে দেখছেন। সামনের সারিতে সংখ্যানুপাতে যে কয়টি আসন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির প্রাপ্য, সেটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপি মনে করে, সামনের সারিতে আরও আসন তাদের প্রাপ্য। আসনবিন্যাসের সংকট আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও সেটা যে উপেক্ষণীয় নয় তা বিগত দুটি অধিবেশনে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি থেকেই বোঝা যায়। এ ব্যাপারে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই।
এটা ঠিক যে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব আছে। তাদের সংসদ অধিবেশনে যেতে হবে। যাওয়া উচিত। বস্তুত, বিএনপি ও তাদের জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর অনেকেই অধিবেশনে যোগ দিতে আগ্রহী। কারণ, তারা জানে যে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, টিপাইমুখ বাঁধ, গ্যাস রপ্তানি প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের জবাবদিহি চাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যাচ্ছে। সংসদে তারা জনজীবনের এসব জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য করতে পারে। এতে দেশের মানুষ খুশি হবে। বিরোধী দলের ভাবমূর্তিও উন্নত হবে। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী তাদের অবিলম্বে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়া উচিত।
অধিবেশনে না গেলেও সংসদীয় কমিটিগুলোয় বিএনপির সাংসদেরা সক্রিয় অবদান রাখছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে এসব কমিটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সরকারের জবাবদিহিতা আদায়ে সচেষ্ট রয়েছেন। এটা উত্সাহব্যঞ্জক। কিন্তু বিরোধী দলকে সংসদেও যেতে হবে। বিরোধী দলবিহীন অধিবেশন অর্থহীন। নিষ্প্রাণ সংসদ কখনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না।
এখানে সরকারি দলকে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বড় দল হিসেবে তাদের দায়িত্ব বেশি। তারা যদি অন্তত অনুকূল মনোভাব দেখায়, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করে এবং স্পিকারকে স্বাধীন উদ্যোগ গ্রহণে উত্সাহিত করে, তাহলে সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। বড় দলসুলভ অহমিকা সব সময় পরিত্যাজ্য। মনে রাখতে হবে, সংসদে আসন কম হলেও ভোটের সংখ্যানুপাতে বিএনপি কিন্তু এখনো বেশ বড় ও প্রভাবশালী দল। বিগত সংসদেও কিন্তু আওয়ামী লীগ আজকের বিএনপির মতো অবস্থায় ছিল এবং ভবিষ্যতে যে আবারও সে অবস্থায় যাবে না, তা কে বলবে?
সুতরাং সরকারি দলের দূরদৃষ্টি কাম্য। সংসদ কার্যকর হলে রাজনীতি টিকে থাকবে, টিকে থাকবে গণতন্ত্র। এ মুহূর্তে এর চেয়ে বড় দায়িত্ব আর কিছু হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.