অ্যাশেজ মীমাংসার টেস্ট শুরু আজ

নাটকের শেষ অঙ্ক মঞ্চায়নের জন্য প্রস্তুত ওভাল। ওভাল! এর চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কী হতে পারে? ১৮৮২ সালে এই ওভালেই ইংল্যান্ডের ৭ রানের পরাজয়ের শোক থেকেই তো জন্ম নিয়েছিল অ্যাশেজ কিংবদন্তি। এই ওভালেই স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত শূন্য। এই সেই ওভাল, ১৯ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে ডেনিস কম্পটন ১৯৫৩ সালে ইংলিশদের এনে দিয়েছিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত ভস্মাধার। এই ওভালই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখেছে ২০০৫-এ। কেভিন পিটারসেনের সেঞ্চুরিতে ড্র নিশ্চিত করে ১৮ বছর পর আবারও অ্যাশেজ ঘরে তুলেছিল ইংল্যান্ড!
সেই ওভালে আজ থেকে যখন শুরু হচ্ছে এবারের অ্যাশেজের ভাগ্য-নির্ধারণী টেস্ট, ইতিহাসের ছড়িয়ে থাকা এই সব নুড়ি-পাথরও যেন ধরা দিচ্ছে মানিক-রতন হয়ে।
রিকি পন্টিংয়ের কথাই ধরুন। আর সব বাদ দিয়ে ২০০৫ সালের অভিজ্ঞতাটাই তাঁর মনে সবচেয়ে টাটকা থাকার কথা। সেবার পন্টিংয়ের অধিনায়কত্বেই তো ১৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ হারানোর কলঙ্ক। প্রতিশোধের আগুন কি জ্বলছে না তাঁর মনে?
পন্টিং নিজ মুখে স্বীকার করেছেন, ক্যারিয়ারের ১৩৬তম টেস্টটি গুরুত্ব বিবেচনায় ছাপিয়ে যাচ্ছে বাকি সবকিছুকেই, ‘আমার মনে পড়ে না এমন একটা ম্যাচের জন্য শেষ কবে এতটা রোমাঞ্চিত বোধ করেছি।’
না, প্রতিশোধ স্পৃহায় নয়, পন্টিংকে আলোড়িত করছে ওভালের ইতিহাস। পন্টিংকে হাতছানি দিচ্ছে ইতিহাসও—ইংল্যান্ডে সিরিজ-জয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়কদের তালিকায় নাম লেখানো। আগামী ডিসেম্বরে ছত্রিশে পা দিতে চলা পন্টিংয়ের যে এটাই শেষ সুযোগ। আবার কি ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ খেলতে আসা হবে তাঁর?
এ জন্যই পন্টিংয়ের এত ব্যাকুলতা। না হলে রীতিমতো দিব্যি কেটে তিনি বলছেন, প্রতিশোধ-ট্রতিশোধ কোনো কিছু মাথায় নেই তাঁর। কিন্তু পন্টিংয়ের এই দাবি আপনি বিশ্বাস করবেন কি না আপনার ব্যাপার। কারণ তাঁর এ মন্তব্যটাই যে তা বিশ্বাস করতে দিচ্ছে না, ‘২০০৫ সালের ওই পরাজয়ে আমি যতটা আহত হয়েছি, ড্রেসিংরুমে আমার পাশের খেলোয়াড়টি কিন্তু এর চেয়ে কম আহত হয়নি।’
কী আশ্চর্য দেখুন, শেষ টেস্টের প্রিভিউটার শুরু অর্ধেক অস্ট্রেলিয়া জিতবে কি না এই খাতেই বরাদ্দ হয়ে গেল! অথচ লর্ডসে ইংল্যান্ড জেতার পর মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডে টানা দুই অ্যাশেজ হেরে যাওয়া অধিনায়কের তালিকাতেই না নাম উঠে যায় পন্টিংয়ের। আসলে লর্ডসের ওই চপেটাঘাত যেন ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলীয়দের। এজবাস্টন টেস্টে যে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু, তার পূর্ণতা এসেছে হেডিংলিতে ইংনিস ব্যবধানে জয় দিয়ে।
গত দুই টেস্টে ২০০৫ অ্যাশেজের দুই নায়কের অনুপস্থিতি অবশ্য ভালোই অনুভব করেছে ইংল্যান্ড। পিটারসেন দর্শকই হয়ে গেছেন। অনেক দোনোমনা শেষে ওভালে ফিরছেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। যেটি তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ফ্লিনটফের টেস্ট বিদায় সংবর্ধনার মৌতাতে যেন আচ্ছন্ন পুরো ক্রিকেট বিশ্বই।
অস্ট্রেলীয়দের কাজই হলো এসবের ফাঁক-ফোকর থেকে ফায়দা খুঁজে নেওয়া। পন্টিং যেমন বলছেন, ফ্লিনটফের বিদায়ী টেস্টের কারণে ইংল্যান্ডের মনোযোগ অন্য দিকে থাকবে। ফ্লিনটফ নিজে অবশ্য এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন, ‘১-১-এ সিরিজে সমতা, ওভালে জিতলেই অ্যাশেজ জয়—এসব অনেক বড় ব্যাপার। এটা আমার শেষ টেস্ট হতে পারে, কিন্তু আমি এটা নিয়ে অযথা উত্তেজনায় ভুগছি না। কারণ অ্যাশেজ জেতার সুযোগ এর চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার।’
ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস কিন্তু বলছেন, এই টেস্টে ফ্লিনটফ অবশ্যই বড় ব্যাপার। আর তাঁর বিদায়ী টেস্টে সতীর্থরা জয়ই উপহার দিতে চায়। জয় ছাড়া অন্য কিছু ইংল্যান্ড ভাবছে না। ভাবার অবকাশও নেই। ম্যাচটা ড্র হলেও গতবারের বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ার কাছেই থেকে যাবে অ্যাশেজ ট্রফি।
অস্ট্রেলিয়ার ড্র হলেই চলে—এ ধরনের কথাবার্তা আবার মাইকেল ক্লার্কের মোটেও ভালো লাগছে না। অধিনায়কের পথে না হেঁটে সহ-অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছেন, জয় দিয়েই হবে প্রতিশোধ। তা ছাড়া টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে চাইলে জয়ের বিকল্পও নেই অস্ট্রেলিয়ার হাতে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ভারত—চার দলের মধ্যে মাত্র ৫ পয়েন্টের ব্যবধান। ওভাল টেস্ট ও শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড সিরিজের ফলাফলে তাই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে শীর্ষ চারের অবস্থানের।

No comments

Powered by Blogger.