ঋণ ও আমানতের সুদের ব্যবধান পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে কম

দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হারসমূহের মধ্যকার ব্যবধান ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মে মাসে কিছুটা বেড়েছে।
আর এই ব্যবধান প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বেশি হলেও পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় কিছুটা কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এতে দেখা যায় যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের গড় ভারিত সুদের হার ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর ফলে দুয়ের মধ্যকার ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশীয় পয়েন্ট।
আর মে মাসে এসে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এই ব্যবধান আরও কমিয়ে পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টে নামিয়ে আনার পক্ষপাতী।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ভারতে এই ব্যবধান চার থেকে সাড়ে চার শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ঋণ ও আমানতের সুদহারের মধ্যে ব্যবধান যথাক্রমে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশীয় পয়েন্ট ও ৬ দশমিক ৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায় যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের শেষে অর্থাত্ ২০০৮ সালের জুন মাসে ব্যাংকগুলোয় ঋণের ক্ষেত্রে গড় ভারিত সুদের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ আর আমানতের হার ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এর ফলে ঋণ ও আমানতের সুদহারের মধ্যকার ব্যবধান ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে নেমে এসেছিল ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশীয় পয়েন্টে (পারসেন্টেজ পয়েন্ট)।
মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সমন্বয় করার ফলে আমানতের প্রকৃত সুদের হার এখন তিন শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালের মে মাসের হিসাবে এই হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর গড় ভারিত হিসেবে এই হার ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।
অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করলে ঋণের সুদের হার মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা কিনা গড় ভারিত হিসেবে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
তার মানে হলো, আমানতকারীরা ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে অনেক কম হারে সুদ পাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে ঋণের সুুদের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিক থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়। তখন থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হতো না, পরামর্শ দেওয়া হতো।
কিন্তু দুই বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দেশনা জারি করে সুদের হার বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বমন্দার পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাশীল আচরণের অভাবই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের সুদহার বেঁধে দিতে বাধ্য করেছে।

No comments

Powered by Blogger.