হামাস নেতা সিনওয়ারের মৃত্যুতে বিশ্বনেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষনেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সিনওয়ারের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করলেও হামাস এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বুধবার তারা তিন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে একজন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এ বছরের ৩১ জুলাই ইরানে হামাসের সাবেক শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করার পর আগস্টে সশস্ত্র সংগঠনটির দায়িত্বে আসেন সিনওয়ার। যার মৃত্যুর বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। তার মৃত্যু সংবাদে গোটা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। কেননা গত বছরের ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলার পরিকল্পনাকারী সন্দেহভাজন হিসেবে ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে ছিলেন হামাসের এই নেতা। নিচে সিনওয়ারের মৃত্যুতে বিশ্বনেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো।

অনলাইন আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনওয়ারের মৃত্যুতে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ইসরাইল সিনওয়ারের সঙ্গে তার হিস্যা চুকিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। তিনি সরাসরি সম্প্রচারিত এক বার্তায় বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি লক্ষ্য অর্জন যার মাধ্যমে অন্ধকারের উপর আলোর বিজয় হয়েছে। গাজায় হামাস কখনই তাদের শাসন চালাতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

হামাসের হাতে ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবারের সংগঠনও সিনওয়ারের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার ইসরাইলি সেনাবাহীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, সিনওয়ারের মৃত্যু গাজায় বন্দি জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়তা করবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যু ইসরাইলিদের জন্য স্বস্তির মুহূর্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এতে করে কোনো গোষ্ঠীগত শক্তি ছাড়াই গাজা পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিবৃতিতে বাইডেন আরও বলেছেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার যেসকল লক্ষ্য অর্জনে বাধা ছিলেন এখন আর সেসকল বাধা নেই। কিন্তু সামনে আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি।

ইরান সরাসরি এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও জাতিসংঘে দেশটির মিশন জানিয়েছে, হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ‘শষ মুহূর্তগুলো’ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নতুন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। শুক্রবার জাতিসংঘে ইরানের মিশন সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য লিখেছে। সেখানে বলা হয়, মুসলমানরা যখন যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে শহীদ সিনওয়ারের দিকে তাকাবে- যুদ্ধের পোশাকে এবং গোপন আস্তানায় নয়, খোলা জায়গায় শত্রুর মুখোমুখি হবে- প্রতিরোধের চেতনা তখন আরও শক্তিশালী হবে। এতে আরও বলা হয়, তিনি (সিনওয়ার) তরুণ ও শিশুদের জন্য একজন মডেল হয়ে উঠবেন, যারা ফিলিস্তিনের মুক্তির দিকে তার পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

২৭ দেশের জোট ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান জোসেপ বোরেল সিনওয়ারকে ‘জরুরি প্রয়োজনে যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির পথে বাধা’ বলে বর্ণনা করেছেন। এক্সের এক বার্তায় তিনি লেখেন, ইয়াহিয়া ইইউ-এর তালিকাভুক্ত একজন ‘সন্ত্রাসী’ ছিলেন। ইসরাইলে ৭ অক্টোবর হামলার জন্য সিনওয়ারকে দায়ী করেছেন ইইউ-এর পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান। তিনি জিম্মিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বন্ধের আহ্বান জানান।
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুট ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যদি তিনি (সিনওয়ার) মারা যান তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে মিস করব না।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.