৩৪ বছর একই কর্মস্থলে মান্নান, ঠেকালেন বদলি by ওয়েছ খছরু
এর আগে সেরেস্তা শাখার পেশকার ছিলেন। ঘুষ, দুর্নীতি ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ভূমি অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ২০১১ সালের ২৫শে জুলাই এক আদেশে মান্নানকে তাৎক্ষণিক বদলি করেন। তখন আব্দুল মান্নান জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকে ম্যানেজ করে একই অফিসেই পুনরায় বহাল থেকে যান। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশও উপেক্ষিত। সিলেট সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে যে ক’জন কর্মচারী অবাধে দুর্নীতি করেছেন তাদের মধ্যে আব্দুল মান্নান অন্যতম। সিলেট অঞ্চলে শেষ হওয়া সেটেলমেন্ট জরিপে দায়িত্বে থাকায় দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি উপার্জন করে গড়েছেন সম্পদও। টাকার বিনিময়ে ভূমি রেকর্ড পরিবর্তন করে তিনি এই আয় করেন। ২০২০ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কর্মচারী নেপাল কান্তি চাকমাকে সরিয়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী হন। আব্দুল মান্নান সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া মৌজার রেকর্ড বহাল রাখার স্বার্থে ভূমি মালিক মাহতাব আহমদ খোকনের নিকট থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নিলেও কাজ করেননি। এ নিয়ে মাহতাব একাধিক অভিযোগ ও সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন করলেও কাজ হয়নি। সেটেলমেন্ট সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল মান্নান ১৯৮৮ সালে তৃতীয় শ্রেণির কপিস্ট-কাম-বেঞ্চ সহকারী পদে সিলেট জোনাল সেটেলমেন্টের কর্মে যোগদান করে এখনো সিলেটে কর্মরত। এরই মধ্যে সিলেট সেটেলমেন্টের একমাত্র ক্যান্সার হিসেবে আব্দুল মান্নান অতি সুপরিচিতি লাভ করেন। সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত পেশকার হিসেবে দায়িত্ব লাভ করায় রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন একই অফিসে কর্মরত থাকার সুবাদে নিজ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলাধীন দিঘুটিয়া নিজ গ্রামের বাড়িতে, মুক্তাগাছা উপজেলা সদরে, ময়মনসিংহ শহরের আকুয়াপাড়া, সিকদার বাড়ির পেছনে, তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায়, মাসকান্দা বারেরা বাইপাসে, খাগডহর ও বাইপাস নামক স্থানে নামে-বেনামে অঢেল ভূ-সম্পত্তি অর্জন করেছেন। সিলেট শহরে তার প্রায় ১০ থেকে ১৫টি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ায় চলাচল করছে। এ সিএনজি অটোরিকশাগুলোর ভাড়া আদায় ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন তারই এলাকার আরেক সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার মো. বাবুল মিয়া। আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের বাসিন্দা মো. সুলেমান ফারুক সুনামগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশনায় সিলেট দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. সোহেল আহমদ, একই জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আব্দুল মমিন, আব্দুস সামাদ এবং সিলেট শহরের বাসিন্দা মো. মাহতাব আহমদ খোকন ও সুজিত কুমার দেসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাধীন পদ্ধনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. সুলেমান ফারুক সুনামগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলাটিও আদালতের নির্দেশনায় সিলেট দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে সিলেট সেটেলমেন্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, তিনি বদলি ঠেকাননি। এবার বদলির পর দেখা গেল চাকরির আর দু’মাস বাকি রয়েছে এজন্য সংশ্লিষ্টরা আদেশ বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটে যেহেতু চাকরি করেছি সে কারণে সিলেট থেকে চাকরিতে অবসরে যেতে চাই। আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments