এক্সেলসিওর সিলেটে চোখ রাঙানি, প্রবাসী পরিচালকদের মামলা
সিলেটে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের একটি প্রকল্প হচ্ছে এক্সেলসিওর সিলেট। সিলেটের পরিচিত একটি রিসোর্ট এটি। এই রিসোর্টে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই হচ্ছেন লন্ডন প্রবাসী। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রবাসী পরিচালকদের নিয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ এটি পরিচালনা করছিলেন। ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে প্রকল্পটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে চোখ রাঙানির মুখে পড়া প্রবাসীরা দেশে এসে মামলা করলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। সশস্ত্র মহড়া চালিয়ে প্রকল্পের ভেতরে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ঢুকতেও দেয়া হচ্ছে না। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে শাহপরান থানায় মামলা করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে পূর্বের মালিক ডা. মো. জাকারিয়া আহমদের কাছ থেকে এক্সেলসিওর কর্তৃপক্ষ ঋণসহ প্রায় ৩২ কোটি টাকার বিনিময়ে জাকারিয়া সিটি কিনে নেন। এরপর সেটির নাম পরিবর্তন করে তারা এক্সেলসিওর সিলেট করেন। প্রথমে শাহজামাল নুরুল হুদাসহ তিনজন পরিচালক এ প্রকল্প কিনলেও পরবর্তীতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীর ন্যায্য হিস্যা দিয়ে ১৯ জনকে ডাইরেক্টর করা হয়। ২০১৮ সালে পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে দুই পরিচালক এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০২১ সাল পর্যন্ত হাইকোর্টের মাধ্যমে পুরো কোম্পানির বিষয় নিয়ে একজন নিরপেক্ষ প্রশাসক দিয়ে ১০ জনকে পরিচালক ও ৯ জনকে শেয়ারহোল্ডার করে আদেশ দেয়া হয়। পরে এ বিষয় নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানি হলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখা হয়। ২০২২ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রবাসী বিনিয়োগকারী পরিচালকরা প্রকল্পের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পূর্বের পরিচালক ও বর্তমানে প্রকল্পের বাইরে থাকা ব্যক্তি শাহ জামাল নুরুল হুদা ও তার লোকজনের ভয়ভীতির কারণে ঢুকতে পারেননি। পরবর্তীতে অবশ্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রবাসী বিনিয়োগকারী পরিচালকরা ঢুকে সাধারণ সভা করেন। পরিচালকরা জানিয়েছেন, তখন তারা সাধারণ সভা করে প্রবাসী বিনিয়োগকারী জিলু মিয়াকে সভাপতি, মাসুকুর রহমানকে এমডি, আব্দুল বাসিত খান ও মাসুম আহমদকে সহ-সভাপতি করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। এরপর থেকে নতুন পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে চলছিল অর্ধশত কোটি টাকার এই প্রকল্প। ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের দিন একদল সন্ত্রাসী বিকাল ৪টার দিকে প্রকল্পের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরে গভীর রাতে তারা হামলা চালিয়ে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনার পর প্রকল্পের সুপারভাইজার হুসেন আহমদ বাদী হয়ে শাহপরান থানায় প্রকল্প এলাকার পূর্ব দলইরপাড়া গ্রামের আব্দুস শহীদ, আল আমিন ও আব্দুল জলিল লেবু মিয়ার নামে অভিযোগ করেন। আসামিদের মধ্যে দু’জন হচ্ছেন প্রকল্পের শেয়ারহোল্ডার। ওসি মনিরুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দেয়ার পর আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাই। সত্যতা পাওয়ায় মামলা রেকর্ড করে আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্সেলসিওর সিলেটের এমডি মাসুকুর রহমান অভিযোগ করেছেন, শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়া পূর্বের চেয়ারম্যান শাহজামাল নুরুল হুদার ইশারায় ৫ই আগস্ট কিছুসংখ্যক দুর্বৃত্ত প্রকল্পে হামলা, লুটপাট চালায়। তারা নগদ ৭ লাখ টাকা লুট করা ছাড়াও কোটি টাকার ক্ষতি করে। ওই সময় নুরুল হুদা লন্ডনে থাকলেও ৭ই আগস্ট তিনি দেশে ফিরে সশস্ত্র ক্যাডারদের নিয়ে প্রকল্পে অবস্থান করছেন। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এখন গোটা প্রকল্প আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে এই অবস্থায় খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম ডালিম তার বাসায় গত মঙ্গলবার নুরুল হুদাসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে পরিচালক ডা. মো. জাকারিয়া আহমদও উপস্থিত ছিলেন। মাজহারুল ইসলাম ডালিম জানিয়েছেন, সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে প্রবাসীরা পরিচালক হয়ে আইনসম্মত ভাবে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছেন। এসব নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে বিবদমান উভয়পক্ষ উত্তেজিত হয়ে ওঠার কারণে সমঝোতা বৈঠকে কোনো সূরাহা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের আইনজীবী এডভোকেট ইজাজুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, একজন বহিরাগতকে নিয়ে দু’জন স্থানীয় শেয়ার হোল্ডার বেআইনিভাবে এখন প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের প্রতি চোখ রাঙাচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন। অথচ প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় প্রথম হাইকোর্ট ও পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্টে নিষ্পত্তি হয়ে দিক নির্দেশনা রয়েছে। সেই দিক নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রবাসীদের বিনিয়োগকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পের চেয়ারম্যান জিলু মিয়া মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রকল্পের ভেতরে এখন অবৈধ স্পা সেন্টার খুলে অসামাজিক কার্যকলাপ করা হচ্ছে। যেটি আমরা কখনো সহ্য করিনি। এখন সেখানে প্রতিদিনই সশস্ত্র মহড়া দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে শাহ জামাল নুরুল হুদা জানিয়েছেন, তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হলেও এখন প্রকল্পের সঙ্গে নেই। তবে- পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন। যারা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন সবাইকে নিয়ে বসে এখন একটি ফয়সালা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উভয়পক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছেন বলে জানান তিনি।
No comments