স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারের বুলেটবিদ্ধ হয়ে হাজারো মানুষ এখনো হাসপাতালের বিছানায়, রাজপথে শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের মধ্যে ন্যূনতম অনুতাপ নেই। বরং মাফিয়া প্রধানের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীরা ইতিমধ্যে ঘরে-বাইরে, সরকারে এবং প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত শুরুতেই উপড়ে ফেলতে না পারলে তাদের বিষাক্ত দংশনে ছাত্র-জনতার শত শহীদের অর্জনে গণতন্ত্র আবারও বিপন্ন হবে।
তিনি বলেন, গণহত্যাকারী পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে একটি সরকারের জন্য আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয় নির্ধারণ এবং অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করার জন্য হয়তো আড়াই মাস কম সময়ও নয়। আমি আগেও বলেছি, সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সেটি প্রত্যাশিত গণতন্ত্র উত্তোরনের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণঅভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে সরকারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন রকম বক্তব্যে এসেছে। এমন একটি কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ ও সংশয় উদ্বেগ করে। জনগণ সরকারকে আরও দায়িত্বশীল এবং গণমুখী ও কার্যকর দেখতে চায়। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ও জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনই বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান সরকারকে নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের নিঃস্বার্থ সমর্থনের প্রতি নিঃস্বার্থ মূল্য দেয়া এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি বরাবর সংস্কারের পক্ষে। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান একটি প্রক্রিয়া। কখনো কখনো সেটি সময়সাপেক্ষ। তবে যেকোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্ব সৃষ্টি না হলে সেই সংস্কার শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেয় না বা পাওয়া যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক মাফিয়া চক্রের দুঃশাসনের সময়, পলাতক স্বৈরাচারের সমর্থিত নেতাকর্মী সারা দেশে অবৈধভাবে ভিন্নমতের অনেক মানুষের জমি-জায়গা দখল করেছিল। ফ্ল্যাট, দোকান, নদী-নালা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও তারা দখল করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জবরদখলকারীদের কাছ থেকে অনেকেই তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা-জমি-সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। সুতরাং সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে একটি কাযকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত এবং ক্ষুদে ব্যবসায়ী, বিক্রেতা কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষ সবাই এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যে সাধারণ জনগণের অনেকের ক্রয় সীমার বাইরে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও জনগণের আয় সেভাবে বাড়েনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। মানুষকে আধপেটা রেখে কোনো ভালো কথাই গেলানো সম্ভব নয়।
তারেক রহমান বলেন, বছরের পর বছর ধরে মাফিয়া চক্রের তৈরি বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়তো একটু কঠিন হলেও কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার হয়তো বাড়ানো যেতে পারে। সরকারকে সতর্ক থাকা দরকার। ফ্যাসিস্ট আদর্শ লালনকারী কিংবা মাফিয়া সরকারের সুবিধাভোগীদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে রেখে কোনো উদ্যোগেই সুফল মিলবে না। যেকোনো উপায়ে ঘরে-বাইরে জনগণের প্রতিদিনের দুর্ভোগ কমাতে যদি না পারে সরকার, পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীরা পরিস্থিতির সেই সুযোগ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, গণহত্যা চালিয়ে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণ বাক এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মাফিয়া চক্রের দীর্ঘ ১৫ বছর শাসনকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। জনগণ এখন পলাতক স্বৈরাচারের দুঃশাসনের অভিশাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি চায়। বঞ্চিতরা তাদের হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়। মাফিয়া চক্রের কবল থেকে দেশ এবং জনগণকে মুক্ত করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে স্বাধীন দেশে আমরা আছি। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজনীতিবিমুখ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্র-জনতা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়েছেন। আজকে তারাই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তাদের দায়িত্ব বোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিচারের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা দেশকে ভালোবাসি।
রজতজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, রাষ্ট্রদূত এসএম রাশেদ আহমেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের কয়েকজন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাইফুল আলম নিরব, গোলাম সারওয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমন, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১০জন নিহতের পরিবার এবং ১০ জন আহতকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। নিহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন এবং ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। আহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ উদ্দিন।
No comments