চেঙ্গিস খানদের সঙ্গে যুক্ত হলো হাসিনার নাম by মোদাসসের হোসেন খান বীরপ্রতীক
১) শেখ হাসিনা, ২) চেঙ্গিস খান (মঙ্গোলিয়া), ৩) ইভান, দি টেরিবল (রাশিয়া), ৪) ভ্লাদ, দি ইমপেলার (রুমানিয়া), ৫) দ্বিতীয় লিওপল্ড (বেলজিয়াম), ৬) মাও সেতুং (চায়না), ৭) জোশেফ স্ট্যালিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন), ৮) এডলফ হিটলার (জার্মানি), ৯) পলপট (কম্বোডিয়া), ১০) সাদ্দাম হুসেইন (ইরাক) ও ১১) ইদি আমিন (উগান্ডা)।
তালিকাভুক্ত কুখ্যাত সকল দানব-দানবীর মাঝে শেখ হাসিনার অবস্থানই সবার শীর্ষে। লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, হত্যা নানাবিধ পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো সকল স্বৈরাচারের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলেও হাসিনার হৃদয়ে লালিত ছিল আরেকটি নজিরবিহীন ও অবিশ্বাস্য মনোবৃত্তি। ঘৃণ্য আকাঙ্ক্ষা-তার পিতা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধের জন্য বাংলাদেশ ও এদেশের সকল মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার এক অদম্য বাসনা। তাই এই আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণে স্বদেশের মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সে কেবল ক্ষমতার নিষ্ঠুর অপব্যবহারই করেনি, একে একে দেশের সকল সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাতে নিঃশর্তে তুলে দেয়ার কাজটিও প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছিলেন। এহেন জঘন্য ও রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের সকল দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে পরিতোষ বিতরণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে পদ/পদবি প্রদান এবং অবাধ দুর্নীতির প্রসারে উৎসাহ দানের স্থাপিত হয়েছিল এক অশ্রুত দৃষ্টান্ত। তার নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছিল মুষ্টিমেয় ধনাঢ্য পরিবার (ওলিগার্ক), যারা লুণ্ঠিত ও কুক্ষিগত করেছে দেশের ৭০ থেকে ৮০% অর্থ ও সম্পদ। অন্যদিকে অনাদিকাল যাবৎ ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছিল সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতায় গুপ্ত ও প্রকাশ্য সন্ত্রাসী বাহিনী।
এ সত্য সহজেই অনুমেয়, ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট ও পদলেহনকারী এবং বিবেকবর্জিত এক ক্ষুদ্র শ্রেণি সরকারের সীমাহীন আনুকূল্য লাভ করলেও দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচারের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে একসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হলেও, দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ক্রমাগত অত্যাচার ও নির্যাতনে হয়ে উঠে আতঙ্কিত।
অজস্র পরিবারের প্রিয়জন নির্বিচারে গুম ও হত্যার শিকার হওয়ায়, সঙ্গত কারণেই তাদের প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি ক্রমশ লোপ পেতে থাকে। তাই বিতাড়িত স্বৈরাচারের দুর্নীতি, কুকর্ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে জড়িত হওয়া দুর্বৃত্তদের সংখ্যা অগণিত হলেও, দেশের সরকারি ও বেসরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের দুর্বৃত্তায়নে নীরব সমর্থন দিয়ে এসেছে। তাই পতিত সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধাচরণ না করার অপরাধে অভিযুক্ত করে তাদের সবাইকে সাজা প্রদান করা বা লাঞ্ছিত করা অনুচিত হবে। তবে দেশীয় সম্পদ লুণ্ঠন, অত্যাচার, অনাচার, নিপীড়ন ও হত্যাসহ সকল প্রকার অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের অতি দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করে কঠিনতম শাস্তি প্রদান এই মুহূর্তে দেশপ্রেমিক সকল মানুষের প্রাণের দাবি। সরকারের উপর অর্পিত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব সুষ্ঠু ও দ্রুততম সময়ে সম্পাদন করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করার জন্য
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি:
১) হাসিনার অবৈধ দলীয় সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক বিবেচনায় নিম্ন এবং উচ্চ আদালতে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল অযোগ্য, অদক্ষ ও পক্ষপাতদুষ্ট সকল বিচারকদের অপসারণ করে প্রশ্নাতীতভাবে সৎ, অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ বিচারকদের নিয়োগ দেয়া।
২) ঘুণে ধরা বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারের হৃদয়বিদারক দীর্ঘসূত্রতার কারণে একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বৈরাচার ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ ও দীর্ঘদিনের স্তূপীকৃত সকল মামলা যত শিগগির সম্ভব নিষ্পত্তি করা।
৩) দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা ও বিদেশে পলাতক সকল চিহ্নিত অপরাধীকে ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুততম সময়ে তাদের বিচারের বন্দোবস্ত করা।
৪) গ্রেপ্তারকৃত সকল অপরাধীর শাস্তি প্রদানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সরকারি সংস্থা অথবা জনরোষের শিকার হতে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করা।
৫) কেবলমাত্র কুখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়, অবৈধ এবং ঘাতক হাসিনা সরকারের দস্যুবৃত্তিতে মদতদাতা সকল সংস্থা ও দপ্তরের সুবিধাভোগী ব্যক্তি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি সীমাহীন অর্থসম্পদের অধিকারী হয়ে যাওয়া লুটেরাদেরও বিচারের সম্মুখীন করে লুণ্ঠিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত আনার বন্দোবস্ত করা।
ন্যায়বিচার বিলম্বিত হওয়াই ন্যায়বিচার অস্বীকার করার শামিল। তবে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বিভাজন নয়, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যাশা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশে এবং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস এবং তার নেতৃত্বাধীন অন্যান্য উপদেষ্টাগণের দেশপ্রেম, বিচক্ষণতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দীর্ঘকাল যাবৎ শৃঙ্খলিত এবং পুনরায় মুক্তিপ্রাপ্ত জাতির সামনে তার আকাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক অধিকার এবং উন্নতির নয়া দিগন্ত উন্মোচন করবে। শত সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে এক সম্মানজনক, আদর্শ ও অনুকরণীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথিকৃত হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
No comments