যশোরে মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে, ধর্ষণ অর্থ আত্মসাৎ, ক্লিনিক মালিক গ্রেপ্তার
জানা গেছে, যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার আজিজ সিটি সংলগ্ন শওকত ওসমানের বাসায় ভাড়া থাকেন জোসনা খাতুন (৩৪)। তিনি যশোর সদর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের মো. নুর আলীর কন্যা। তিনি শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের মেডিল্যাব নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রশাসনিক বিভাগে চাকরি শুরু করেন। ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন বেজপাড়ার উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস (৪৭) নামের সনাতন ধর্মের এক ব্যক্তি।
সূত্র বলছে, উজ্জ্বল নানা রকম লোভ লালসার ফাঁদে ফেলে জোসনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে জোসনা বিয়ের জন্য চাপ দিলে উজ্জ্বল নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাকে বিয়ে করবে বলে জোসনাকে শান্ত করেন। জোসনা ও উজ্জ্বল কুমারের মধ্যে চলতে থাকে খোলামেলা শারিরিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের জেরে ও জোসনার চাপাচাপিতে ২০২১ সালের ২০শে জুন ভুয়া এফিডেভিটের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে উজ্জ্বল।
এরপর দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে উজ্জ্বল ও জোসনার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। বিয়ের পর তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা রুহি খাতুনের বর্তমান বয়স ৮ মাস। বিয়ের সময় উজ্জ্বল তার পূর্বের স্ত্রী এবং দুটি পুত্র সন্তান আছে সে তথ্য সম্পূর্ণ গোপন করেছিল। এরই মধ্যে ব্যবসার কথা বলে জোসনার কাছ থেকে নানা ছলে কৌশলে ১১ লাখ টাকা নেয় উজ্জ্বল।
গত ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস জোসনার সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পর জোসনার ঠিকানায় ডাকযোগে তালাকনামা পাঠায়। এ ঘটনার পর জোসনা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, উজ্জ্বল কুমার বিবাহিত এবং তার পূর্বের স্ত্রী এবং দু’টি সন্তান নিয়ে বেজপাড়ায় সংসার করছে। একপর্যায়ে জোসনা বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করলে এবং আদালতে মামলা করার হুমকি দিলে উজ্জ্বল কুমার জোসনার কাছে ফিরে আসে এবং তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী রূপে সংসার করতে থাকে। কিন্তু মাঝে মধ্যে উজ্জ্বল ৪-৫ দিনের জন্য হাওয়া হয়ে যেতেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে জোসনা নিয়মিত সংসার করার দাবি করলে উজ্জ্বল অস্বীকৃতি জানায় এবং তাকে ও তার সন্তানের ভোরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উজ্জ্বল জোসনাকে জানায় সে একজন হিন্দু ধর্মের লোক। তার পক্ষে একজন মুসলিম নারীর সঙ্গে আর সংসার করা সম্ভব নয়। সে হিন্দু হয়ে পূর্বের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেই সংসার করছে বলে পরিষ্কার ভাষায় জোসনাকে জানিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় জোসনা গত সপ্তাহে বাদী হয়ে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ মোতাবেক যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ জোসনার আবেদনটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে এবং কোতোয়ালি পুলিশ উজ্জ্বল কুমারকে রোববার দিনগত রাতে গ্রেপ্তার করে।
No comments