‘বন্ধুরা যখন ক্লাসে, তখন শরীরে বুলেট নিয়ে কাতরাচ্ছি’ by নাজমুল হক শামীম
চোখ হারানো নাহিদের বাবা মো. বাহার মিয়া বলেন, ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় নাহিদ ফেনীর মহিপালে সার্কিট হাউজ রোডে ৪ জনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। নাহিদ সেসময় আহত অসংখ্য ছাত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরদিন দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে শুনে বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যায় নাহিদ। এখানে সবার আগেই গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ।
আহত নাহিদ বলেন, আমি মিছিলের সামনে ছিলাম। আমার হাতে একটি পতাকা ছিল। হঠাৎ করে হেলমেট পরা ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী গুলি চালানো শুরু করে। প্রথম গুলিটা আমার চোখে লাগে। আমি কিছু দেখছিলাম না। আমি চোখে হাত দিয়ে বসে পড়ি। তখন তারা আমার সারা গায়ে গুলি করে। আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা এই বাংলাদেশে বৈষম্য চাই না। এই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমার অন্তরে সুখ আছে। কিন্তু আমার চোখ দিয়ে আমি আমার সুন্দর দেশটাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমার ভেতরের অনেক কষ্ট থেকে বলছি যে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। যেদিন আমি সুখ করবো, আনন্দ করবো ওইদিন আমাকে এম্বুলেন্স নিয়ে দৌঁড়াতে হয়েছে চট্টগ্রামে।
নাহিদ বলেন, আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ওপর অনেক দায়িত্ব। আমার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবো। কিন্তু আমি এক চোখ দিয়ে কিছু করতে পারবো কিনা জানি না। এমন স্বৈরাচার সরকার আর কখনো চাই না। বেসরকারি চাকরিজীবী বাবা ছেলের চিকিৎসার ব্যায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নাহিদের বাবা মো. বাহার মিয়া। যেকোনো মূল্যে নাহিদ তার চোখ ফিরে পাবে এটাই পরিবারের চাওয়া।
এদিকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে আহত হয়ে কাতরাচ্ছে একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. রিদোয়ান হোসেন। সে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের হাসান হুজুর বাড়ির দিনমজুর মো. ইব্রাহিমের ছেলে। ইব্রাহিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য গত ৪ঠা আগস্ট বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় অবস্থান নেয় রিদোয়ান। মহিপাল সিক্সলেন ফ্লাইওভারের পশ্চিম অংশে হীরা কনফেকশনারির সামনে সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে জোহরের নামাজ পড়ে। নামাজ পড়া শেষ হতে না হতেই গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। পরে সহপাঠীরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে আজ রিদোয়ান বিছানায় কষ্টে দিন পার করছে। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা গুলি করেছে সরকারের কাছে তাদের বিচার দাবি করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম জানান, গত ৪ঠা আগস্ট ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে ফেনীতে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ৮ জন ও চিকিৎসাধীন অবস্থয় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিক। পরদিন ৫ই আগস্ট বিকালে বিজয় মিছিলে ফের গুলি চালালে সেখানেও বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ দীন মোহাম্মদ বলেন, ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে হত্যার ঘটনায় রোববার পর্যন্ত থানায় ৫টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ৭শ’ এজাহার নামীয় আসামিসহ ১ হাজার ৬২৩ জন আসামি হয়েছে। এদের মধ্যে সংসদ সদস্যের পিএস পরিচয় দেয়া মানিক নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
No comments