দাবি-দাওয়া পার্টির অপতৎপরতা by সাজেদুল হক
দাবি-দাওয়া পার্টির আবদারের যেন শেষ নেই। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর স্থানে তারা প্রতিদিনই হাজির হচ্ছে। ধরনা দিচ্ছে, রাস্তাঘাট বন্ধ করছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার চলাচলেও বিঘ্ন তৈরি করছে। উদার-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে এরা যেন রাষ্ট্রকেই অচল করার চেষ্টা করছে। গতকাল বন্যার এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও এদের বিভিন্ন গ্রুপের তৎপরতা থামেনি। তারা এদিনও সচিবালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে অংশ নেয়। সড়কে যান চলাচল ব্যাহত করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের একটি অতিক্রম করছে। এ সময়ে ভয়াবহ বন্যা তৈরি করেছে নাজুক পরিস্থিতি। এই অবস্থায় যেসব সুযোগ সন্ধানী গ্রুপ অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আগেও এক কলামে লিখেছি, রাষ্ট্রকে কখনো কখনো কঠিন হতে হয়।
নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে? এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে তৈরি হয়েছে আশাবাদ। আরেক দিকে হতাশাও রয়েছে। দখল-পুনর্দখলের পুরনো খেলা চলছে কোথাও কোথাও। পরিবহন খাতে হাতবদলের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এরইমধ্যে প্রশাসন এবং পুলিশের একটি অংশে এখনো একধরনের শৈথিল্য দেখা যায়। তাদের নাম দেয়া যায় ‘মন খারাপ পার্টি’। কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করছে, উপরি আয় যদি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, তবে তারা কীভাবে চলবেন?
এ দুই পার্টির বাইরে আরেকটি পার্টি তৎপর। তাদের বলা যায়-‘আগেই ভালো ছিল পার্টি।’ এরইমধ্যে দৈনিক প্রথম আলো’তে হাসান আল মাহমুদ একটি ইন্টারেস্টিং নিবন্ধ লিখেছেন। সেখান থেকে ধার করে নিজের মতো করে বলি। এটা বিশেষত গল্প কিংবা সিনেমায় দেখা যায়। এক নারীকে কেউ অপহরণ করলেন। দীর্ঘদিন আটকে রেখে নানা নির্যাতন করলেন। একসময় ওই নারী অপহরণকারীর প্রেমে পড়ে যায়। স্বৈরশাসকদের বেলাতেও কখনো কখনো এমন ঘটে। যেমন হাসান আল মাহমুদ সে নিবন্ধে লিখেছেন, ‘স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রকৃতার্থে নাগরিকদের অবস্থা পণবন্দির মতোই হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে স্বৈরশাসকের প্রতি নাগরিকদের একটা অংশের মধ্যে অন্ধ মোহ তৈরি হয় এবং যত খারাপ পদক্ষেপই স্বৈরশাসক নিক না কেন, অনেকে সেটিকে কল্যাণকর মনে করেন। একনায়কের পতনের পর এই উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একধরনের হাহাকার ও কাতরতা অনুভব করেন।’ এই মানুষরা হয়তো মুক্তির আনন্দ কী তা বুঝেন না। মুক্তির আনন্দ বুঝাতে সাংবাদিক আকবর হোসেনের একটি লেখা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকার রাস্তায় আমি হাঁটি আর মুগ্ধ হই। বড় রাস্তার পাশে, অলিগলিতে- এত সুন্দর গ্রাফিতি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এত সৃজনশীল সেটা জানা ছিল না। দেশ ও সমাজ নিয়ে তাদের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ। কথা বলতে গেলে আরও মুগ্ধ হই। আসলে মানুষের জীবনে মুক্তি না আসলে সৃজনশীলতাও আসে না। বাবা-মা বাধা দিচ্ছে না, কেউ তাদের কিছু বলছে না। আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশকে ওউন করছে অনেকে। সবাই বলছে, বাংলাদেশ আমার। ‘মুক্তি’ কী জিনিস সেটা ‘মুক্ত’ না হলে বোঝা যায় না।’
No comments