সেরাজুলের শরীরে ৭০ গুলি, নিভে গেছে চোখের আলোও

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে কলেজছাত্র সেরাজুলের শরীর। নিভে গেছে তার চোখের আলো। তারপরও এতটুকু দুঃখ নেই। শরীরের রক্তে ধুয়ে গেছে সব ধরনের বৈষম্য—এতেই প্রশান্তি দরিদ্র মৎস্যজীবীর ছেলে সেরাজুলের।

সেরাজুল ইসলাম (২১) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী জেন্দার আলীর ছেলে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সবেমাত্র স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন। শরীরে ৭০টি বুলেটের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে এখনো কাতরাচ্ছেন তিনি।

গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন সেরাজুল। একপর্যায়ে পুলিশ ছররা গুলিবর্ষণ করলে তার চোখসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়। সৈয়দপুরের মাছ ব্যবসায়ী জেন্দার আলীর বাড়িতে সরেজমিন দেখা যায় শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কলেজ ছাত্র সেরাজুল। পাশেই মা রোজিনা খাতুন বসে ছেলের কষ্ট দেখে অঝোরে কাঁদছেন।

সেরাজুলের বাবা জেন্দার আলী বলেন, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে। আর সে গুলিতেই ঝাঁজরা হয়ে যায় সেরাজুলের শরীর। রক্তাক্ত শরীরে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়লে বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, সেরাজুলের চোখ, মাথা, বুক, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। একটি বুলেট বাঁ চোখে বিদ্ধ হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হলেও বাঁ চোখের আলো নিভে যায় সেরাজুলের। মা রোজিনা খাতুন বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। আজ আন্দোলনে চোখ হারিয়ে ওর ভবিষ্যৎটা অন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেটা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেল। আমরা আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম।

সেরাজুল বলেন, তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে দরিদ্র বাবা-মায়ের অভাব ঘোচাবে। কিন্তু কোটা প্রথা তার মতো অনেকের স্বপ্নের পথেই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এ কারণেই ছাত্রসমাজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। সারা দেশের ছাত্রসমাজ সম্মিলিতভাবে কোটা নামের প্রাচীর সরিয়েছে। গড়ে উঠবে মানবিক এক বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.