আরজিকর কাণ্ডে কতটাই বা সত্যি আর কোনটা মনগড়া by সেবন্তী ভট্টাচার্য্য

আরজিকর কাণ্ডের বিভিন্ন ধরনের ভুয়া খবর বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেইসব খবর পড়ছেনও মানুষজন। পশ্চিমবঙ্গ  পুলিশ  জানিয়ে দিয়েছে  উত্তেজনার এই সময় বিভিন্ন ধরনের খবর বাজারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, কোনওভাবেই ওইসব খবর বিশ্বাস করবেন না। ভুয়া খবর রটানোর অভিযোগ বহু মানুষকে তলব করা হয়েছে লালবাজারে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নির্যাতিতার শরীরে ২৫টিরও বেশি গভীর ক্ষতের উল্লেখ। যেখানে ১৬টি বাহ্যিক আঘাত আর ৯টি অভ্যন্তরীণ আঘাত। নির্যাতিতার মাথা, মুখ, ঠোঁট, চোখ, ঘাড়, হাত, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষতের উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। এরপরেই বেড়েছে ভুয়া খবরের রমরমা। মামলায় কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক শিথিলতা, ২০১৩ সালের কামদুনি গণধর্ষণ নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েলের সমালোচনা সমস্ত কিছু এই অবিশ্বাসের ভীতকে আরও মজবুত করেছে।

আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় এবং এই ঘটনায় তিন ঘণ্টা পরে অধক্ষ্যের পরিবারকে জানানো ঘটনা জল্পনা আরও উসকে দেয়। অঙ্গ পাচারের দাবি, হাসপাতালে পর্নোগ্রাফি র‌্যাকেটের মতো তথ্য কোনওটির এখনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ মেলেনি। সবচেয়ে বিরক্তিকর কিন্তু বিভ্রান্তিকর দাবি, ধর্ষণকে গণধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা।  ডাক্তারের ধর্ষণ-হত্যার পর প্রাথমিক দাবি ছিল গণধর্ষণের। যা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এমনকী সুপ্রিম কোর্ট আদালতের যুক্তির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও ব্যবহার করার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পরামর্শ দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এও বলা হয়, নির্যাতিতার পেলভিক হাড়, গলার হাড়-ভাঙা সহ বিভিন্ন বহু জায়গায় আঘাতের কথা বলা হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশানর দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, কোনও হাড় ভাঙা ছিল না।

এর পাশাপাশি  সিবিআই কর্মকর্তার নাম করে এক চিঠিকেও  ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। দেখা যাচ্ছে  আকাশ নাগ নামে সিবিআইয়ের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্তা একটি চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। সেখানে লেখা হয়েছে, তিনি আরজিকর কাণ্ডে সিবিআইয়ের যে তদন্ত হচ্ছে সেখান থেকে তিনি সরে আসতে চান। কারণ আরজি করের তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার পর মনে হয়েছে এটি একটি পরিকল্পিত খুন। যেসব তথ্যপ্রমাণ জড়ো করা হয়েছে সেসব একেবারে জালিয়াতি করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে রাজনীতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীদের চাপ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই চিঠি ভাইরাল হওয়ার পরপরই চিঠিটি যে ভুয়া তা স্পষ্ট করে দিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, সিবিআইয়ের ডিআইজি পরিচয় দিয়ে   আকাশ নাগ নামে এক ব্যক্তির একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে। ওই নামে কোনও সিবিআই অফিসার নেই। চিঠির বিষয়বস্তু একেবারেই মিথ্যে।

No comments

Powered by Blogger.