ডেঙ্গু সচেতনতায় পান্ডুঘরের প্রচারণা

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে পান্ডুঘর গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কর্মীদের সচেতন করার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় ও এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে এ প্রচারণায়।
পান্ডঘরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। মশয়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিমপাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্যক্তিগত সতর্কতা: ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতার গুরুত্ব অপরিসীম। মনে রাখতে হবে এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাতে উজ্জল আলোতেও কামড়াতে পারে।
তাই-দিনের বেলা যথাসম্ভব শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে, পায়ে মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পড়াতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
প্রয়োজনে স্প্রে, লোশন বা ক্রিম, কয়েল ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন জায়গায় মধ্যে ডিমপাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, তাই-
ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা এবং আশপাশে যে কোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ও দিনের বেশি জমতে দেয়া যাবে না। ৩ থেকে ৫ দিন পরপর পানি ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মারা যাবে। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ঘষে পরিষ্কার করলে ভালো। ঘরের বাথরুমে কোথাও জমানো পানি ৩ দিনের বেশি যেন না থাকে।
একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মস্থলের/বাড়ির ছাদে অনেককে বাগান করতে দেখা যায়, সেখানে টবে বা পাত্রে যেনো জমা পানি ৩ থেকে ৫ দিনের বেশি না থাকে, সেদিকেও যত্নবান হতে হবে। যত্রতত্র প্লাস্টিক-এর বোতল, ব্যাগ, প্যাকেট ফেলা যাবে না। নির্ধারিত জায়গায় আবর্জনা ফেলুন এবং বাড়ির/কর্মস্থলের আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আপনার আশপাশের কোনো বাড়িতে পানি জমে থাকতে দেখলে তাদের অবহিত করুন এবং অতি দ্রুত তা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করুন।
ডেঙ্গু জ্বল হলে যা যা করণীয়:
১. জ্বরের লক্ষণ দেখা মাত্রই রক্ত পরীক্ষা করতে নিয়ে যেতে হবে। এবারে খুব কল্প তাপমাত্রায় (১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রি তাপমাত্র) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং অবহেলা না করে, জ্বরের লক্ষণ দেখা মাত্রই রক্ত পরীক্ষা করে ফেলুন। ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে, চিকিৎসক-এর পরামর্শ মতো নিয়মিত ঈইঈ পরীক্ষা করাতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। এ সময় প্রচার পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন-ডাবের পানি, লেবুর শরবত ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। সাধারণ একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। এই কয়েক মাস অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।

No comments

Powered by Blogger.