৩৭০ ধারা বাতিল: দুই ভাগ হলো কাশ্মির, উত্তপ্ত রাজ্যসভা

আলাদা হলো জম্ম-কাশ্মির ও লাদাখ
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কাশ্মিরের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বা ৩৫-এ ধারা বাতিল করেছে। একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মির থেকে ভেঙে আলাদা করে দিয়েছে লাদাখকে।
গত সোমবার রাজ্যসভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করতে সংসদে প্রস্তাব পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, “ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করা হবে। জম্মু ও কাশ্মির আর রাজ্য নয়।”
অমিত শাহ আরও বলেন, “জম্মু ও কাশ্মির পুনর্গঠিত হবে। রাজ্যটি দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হবে- একটি জম্মু ও কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ।”
সংসদের অনুমোদনের পরই প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ এই প্রস্তাবে সই করেছেন। প্রেসিডেন্টের সইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মিরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদাও হারায় রাজ্যটি।
৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পরপরই সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রতিবাদের ঝড় তোলে বিরোধীরা। কয়েক মিনিটের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। পরে ফের অধিবেশন শুরু হলে, বিরোধীদের হইহট্টগোলের মধ্যেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশনামা পড়ে শোনান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই সংবিধানের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন দুই পিডিপি সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আটক করা হয়। সেই সঙ্গে মেহবুবা মুফতির দলের ওই সাংসদদের রাজ্যসভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভার বাইরে বেরিয়ে এসেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
এদিকে, রাজ্যসভায় বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেন, “আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। স্বাধীনতার পর থেকে যে আত্মত্যাগ ও বলিদান সেনা ও রাজনৈতিক নেতারা দিয়েছেন তার চরম অবমাননা করা হল। তবে পিডিপি সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ সংবিধান ছেঁড়ার যে চেষ্টা করেছেন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা সবসময়ই সংবিধানের সঙ্গেই আছি। সংবিধান রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের প্রাণও বিসর্জন দিতে পারি আমরা। তবে আজ সংবিধানকে হত্যা করেছে বিজেপি।”
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, “আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে কালো দিন। কাশ্মিরের মানুষ কোনোদিনই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।”
৩৭০ ধারাবলে জম্মু-কাশ্মিরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়।ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর।
অন্যদিকে, ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ সেখানকার সম্পত্তি বেচাকেনা করতে পারবে না। স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সরকারি চাকরি এবং স্কলারশিপ সংরক্ষিত। কোনো কাশ্মিরি নারী অন্য রাজ্যের কাউকে বিয়ে করলে তিনি রাজ্যে বিষয়-সম্পত্তির মালিকানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

No comments

Powered by Blogger.